
কিডনির পাথর ও কিডনি ক্যানসার দুটি আলাদা রোগ হলেও সাম্প্রতিক গবেষণায় এদের মধ্যে সম্ভাব্য সম্পর্কের ইঙ্গিত মিলছে। কিডনির পাথর হলো প্রস্রাবে খনিজ জমে তৈরি হওয়া কঠিন পদার্থ, যা তীব্র ব্যথা, সংক্রমণ বা প্রস্রাবের পথ বন্ধ করে দিতে পারে।
অন্যদিকে, কিডনি ক্যানসার হলো কিডনির টিস্যুতে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ফল। সরাসরি পাথর ক্যানসারের কারণ না হলেও দীর্ঘমেয়াদি জ্বালা, প্রদাহ ও স্থূলতা, ধূমপান ও উচ্চ রক্তচাপের মতো সাধারণ ঝুঁকি উপাদান ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়াতে পারে।
আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল ইউরোলজি-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস ও দীর্ঘস্থায়ী প্রস্রাবনালির বাধার মতো অভিন্ন উপাদান কিডনির পাথরকে কিডনি ও ব্লাডার ক্যানসারের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে। তাই সময়মতো শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনির পাথর: কীভাবে হয়?
কিডনির পাথর প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম, অক্সালেট বা ইউরিক অ্যাসিড জমে স্ফটিক আকারে তৈরি হয়। এটি ছোট বা বড় আকারের হতে পারে এবং অনেক সময় প্রস্রাবনালি দিয়ে নড়াচড়ার সময় তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে। পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত লবণ বা প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ, স্থূলতা ও হরমোনজনিত বা হজমের রোগ কিডনির পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
সবচেয়ে সাধারণ পাথরের ধরনগুলো হলো-
ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর: সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
ইউরিক অ্যাসিড পাথর: প্রস্রাব অতিরিক্ত অ্যাসিডিক হলে হয়।
স্ট্রুভাইট পাথর: মূত্রনালি সংক্রমণের সঙ্গে যুক্ত, দ্রুত বড় হয়।
সিস্টাইন পাথর: বিরল ও বংশগত।
কিডনি ক্যানসার: ঝুঁকি ও কারণ
কিডনি ক্যানসার সাধারণত ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় রেনাল সেল কার্সিনোমা।
ঝুঁকির মধ্যে আছে-
বয়স (৬০ বছরের পর বেশি), লিঙ্গ (পুরুষদের ঝুঁকি বেশি), স্থূলতা, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, বংশগত কারণ
কিডনির পাথর কি ক্যানসারের কারণ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাথর সরাসরি ক্যানসার সৃষ্টি না করলেও যাদের কিডনির পাথর হয়েছে তাদের কিডনি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি।
সম্ভাব্য কারণসমূহ:
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ: বারবার পাথর হওয়ার কারণে কিডনিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পুনঃপুন সংক্রমণ: বিশেষত স্ট্রুভাইট পাথরের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রস্রাবের বাধা: বড় পাথর প্রস্রাব আটকে দিয়ে কিডনি ফুলে যাওয়া ও ক্ষত তৈরি করতে পারে, যা সময়ের সঙ্গে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।
অভিন্ন ঝুঁকি উপাদান: স্থূলতা, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ ও দীর্ঘমেয়াদি পানিশূন্যতা- এসবই কিডনির পাথর ও ক্যানসার দুটোর ঝুঁকি বাড়ায়।
লক্ষণগুলোতে মিল
কিডনির পাথর ও কিডনি ক্যানসারের আলাদা কারণ থাকলেও কিছু উপসর্গ মিল থাকতে পারে-
কোমর বা পিঠে ব্যথা (পাথরে হঠাৎ তীব্র, ক্যানসারে দীর্ঘস্থায়ী মৃদু), প্রস্রাবে রক্ত, প্রস্রাবে জ্বালা (পাথরে বেশি দেখা যায়), অযৌক্তিক ওজন কমে যাওয়া (ক্যানসারে বেশি সাধারণ), জ্বর ও কাঁপুনি (সংক্রমণের সময়), পেটে ফোলা বা গিঁট (ক্যানসারে দেখা দিতে পারে)।
কেন এ সম্পর্ক বোঝা জরুরি
কিডনির পাথরের ইতিহাস থাকলে কিডনি ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যায়। তাই এ রোগীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
কিডনিকে সুরক্ষিত রাখার উপায়:
বেশি পানি পান করা, কম লবণ ও প্রাণিজ প্রোটিন খাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান ত্যাগ করা, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন:
যদি কোমর বা পাশের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, প্রস্রাবে রক্ত দেখা যায়, পেটে ফোলা আসে বা অকারণে ওজন কমতে থাকে-তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনির পাথর সরাসরি ক্যানসারের কারণ না হলেও ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই সচেতনতা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া