
বিশ্বজুড়ে হৃদরোগে মৃত্যুহার দ্রুত বাড়ছে। অনেক সময় মানুষ বুঝতেই পারেন না, ধীরে ধীরে তাদের হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং হৃদযন্ত্র বিকল (Congestive Heart Failure) হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীর কয়েকটি সতর্ক সংকেত দেয়, যেগুলো উপেক্ষা করা বিপজ্জনক হতে পারে।
১. শ্বাসকষ্ট
হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে গেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। সিঁড়ি ওঠা, হাঁটা কিংবা স্বাভাবিক কাজের সময় হঠাৎ শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। এমনকি বিশ্রামের সময় বা বিছানায় সোজা হয়ে শোওয়ার সময়ও শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। ফুসফুসে তরল জমে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। অনেকে মাথার নিচে অতিরিক্ত বালিশ দিয়ে শোওয়ার মাধ্যমে স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন। অনেকের ক্ষেত্রে হঠাৎ রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, যা তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তা দাবি করে।
২. পা, গোড়ালি ও পেটে ফোলা
হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা কমে গেলে রক্ত শিরায় জমে ফোলাভাব তৈরি করে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে এডিমা বলা হয়। প্রথমে পা ও গোড়ালিতে ফোলা দেখা দিলেও পরে তা ধীরে ধীরে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। পেটে পানি জমে অস্বস্তি ও ফুলাভাব হয়। হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া বা জুতো ও আংটি আঁটসাঁট হয়ে যাওয়া হৃদযন্ত্রের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
৩. অস্বাভাবিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা
হৃদযন্ত্র ঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে না পারলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছায় না। এর ফলে স্থায়ী ক্লান্তি দেখা দেয়, যা বিশ্রামেও কাটে না। বাজার করা, সিঁড়ি ওঠা বা সাধারণ কাজগুলো হঠাৎই কঠিন হয়ে পড়ে। খাওয়ার পরপরই শরীরে দুর্বলতা ও ঘুমভাব আসে। এ ধরনের উপসর্গ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, কিন্তু মানুষ তা অবহেলা করে ফেলেন।
৪. স্থায়ী কাশি বা হাঁপানি
সাদা বা গোলাপি রঙের কফসহ দীর্ঘস্থায়ী কাশি হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। ফুসফুসে তরল জমে শ্বাসনালীতে জ্বালা সৃষ্টি করে, যা কাশি ও হাঁপানি আকারে প্রকাশ পায়। এই কাশি সাধারণ সর্দি-কাশির মতো নয়—বিশ্রামের সময় বেশি হয় এবং প্রচলিত চিকিৎসায় সারে না।×
৫. দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
হৃদযন্ত্র দুর্বল হলে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখতে এটি দ্রুত বা অনিয়মিতভাবে স্পন্দিত হয়। অনেক সময় বুকের ভেতর দপদপ বা কাঁপুনি অনুভূত হয়। অনিয়মিত হৃদস্পন্দন মাথা ঘোরা, হালকা মাথাব্যথা এমনকি অজ্ঞান হওয়ার কারণ হতে পারে। কারণ, দুর্বল হৃদপিণ্ড মস্তিষ্ক ও শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই সতর্ক সংকেতগুলো দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে জীবন রক্ষা সম্ভব।