যেসব লক্ষণে বুঝবেন আপনি লো ব্লাড প্রেশারে ভুগছেন

আপনার রক্ত ধমনির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় হৃদয় থেকে কতটা জোরে চাপ দেয় এবং সেই রক্ত কতটা বাধার সম্মুখীন হয়, তা-ই সাধারণত রক্তচাপ হিসেবে পরিচিত।

রক্তচাপ আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মের ওপর নির্ভর করে ওঠানামা করে — যেমন ঘুমানো, হাঁটা, দৌড়ানো ইত্যাদি। আর লো ব্লাড প্রেশার বা হাইপোটেনশন হলো যখন রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে যায়।

হাইপোটেনশন কী?
রক্তচাপ দুটি পরিমাপ নিয়ে গঠিত :

সিস্টলিক প্রেশার – যখন হৃৎপিণ্ড সংকোচন করে রক্ত পাম্প করে।

ডায়াস্টলিক প্রেশার – হৃৎস্পন্দনের মধ্যবর্তী বিশ্রামের সময় রক্তচাপ।

রক্তচাপ সাধারণত দুটি সংখ্যায় দেখানো হয়, যেমন ১২০/৮০ (সিস্টলিক/ডায়াস্টলিক)। এই রিডিং যদি ৯০/৬০-এর নিচে নেমে যায়, সেটাকে হাইপোটেনশন ধরা হয়।

অনেক ক্ষেত্রে নিচু রক্তচাপ ভালো, কিন্তু কখনো কখনো এটি ক্লান্তি বা মাথা ঘোরা তৈরি করতে পারে। তখন এটি অন্য কোনো সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।

হাইপোটেনশনের ধরন
হাইপোটেনশন কবে হয় এবং কেন হয়, তার ওপর ভিত্তি করে এটি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়:

১. অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন

হঠাৎ বসা বা শোয়া অবস্থায় থেকে দাঁড়ালে রক্তচাপ কমে যায় — এটাকে অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন বলে। অনেক সময় মাথা ঘোরা বা ‘তারা দেখা’ অনুভব হতে পারে।

বয়স বাড়লে, প্রেগনেন্সি থাকলে বা পারকিনসনস ও ডায়াবেটিস থাকলে এই সমস্যা বেশি হয়।

২. পোস্টপ্রান্ডিয়াল হাইপোটেনশন

খাওয়ার পরে রক্তচাপ কমে যাওয়াকে বলে পোস্টপ্রান্ডিয়াল হাইপোটেনশন। এটি সাধারণত বয়স্ক মানুষ ও যাদের স্নায়বিক সমস্যা আছে তাদের হয়।

৩. নিউরালি মিডিয়েটেড হাইপোটেনশন

স্নায়ু ও হৃদয়ের মাঝে ভুল সংকেত পাঠানোর কারণে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায়। যেমন: অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা (শিশুদের বেশি হয়) অথবা ভয়, চাপ বা মেডিকেল/ডেন্টাল প্রসিডিউরের সময়।

৪. সিভিয়ার হাইপোটেনশন

যখন শরীর শকে যায় (ভয়ংকর আঘাত বা সংক্রমণের কারণে), তখন রক্তচাপ মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। এ অবস্থায় তাড়াতাড়ি চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে।

৫. অন্য ধরনের হাইপোটেনশন

কিছু ওষুধ (যেমন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ), হৃদরোগ, লিভার বা হরমোন সমস্যা বা ভিটামিনের ঘাটতির ফলে এই সমস্যা হয়।

যেসব লক্ষণে বুঝবেন আপনি লো ব্লাড প্রেশারে ভুগছেন

হাইপোটেনশনের কারণ কী?
সবারই কোনো না কোনো সময় রক্তচাপ কমে যেতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক এবং কোনো সমস্যা হয় না।

হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে

হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়া

খাওয়ার পরপর

ভয় বা ধাক্কা লাগা

নিম্ন রক্তচাপের দীর্ঘস্থায়ী কারণ হতে পারে

গর্ভাবস্থা

হৃদরোগ

পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন)

ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের মতো হরমোন সমস্যা

দীর্ঘদিন বিছানায় শোয়া

অ্যালার্জির কারণে শক

রক্তক্ষরণ বা ইনফেকশন

হাইপোটেনশনের লক্ষণ
সবসময় হাইপোটেনশনের লক্ষণ থাকে না। তবে যখন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো যথেষ্ট রক্ত পাচ্ছে না, তখন সমস্যা দেখা দেয়।

লক্ষণ

ক্লান্তি

মাথা ঘোরা

হালকা হয়ে যাওয়া অনুভব করা

বমিভাব

ঠান্ডা ঘাম বা স্যাঁতসেঁতে শরীর

মন খারাপ বা ডিপ্রেশন

অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

চোখে ঝাপসা দেখা

যেসব লক্ষণে বুঝবেন আপনি লো ব্লাড প্রেশারে ভুগছেন
হাইপোটেনশনের চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে কিসে হাইপোটেনশন হয়েছে তার ওপর।

জীবনধারার পরিবর্তন
পানি পান করুন: পানিশূন্যতা এড়াতে প্রচুর পানি খান।

ইলেকট্রোলাইট: প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে স্যালাইন বা লবণযুক্ত পানীয় খেতে হতে পারে।

চিনে নিন কোন পরিস্থিতিতে হয়: যেমন দাঁড়িয়ে থাকার সময়, চিকিৎসা করাতে গিয়ে, বা মানসিক চাপের কারণে।

স্থির থাকবেন না: দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে পা নড়ান বা বসে পড়ুন।

ধীরে ওঠা-বসা করুন: হঠাৎ দাঁড়াবেন না। ধীরে ধীরে অবস্থান পরিবর্তন করুন।

খাওয়ার অভ্যাস বদলান: বার বার অল্প করে খান, খাওয়ার পর হঠাৎ দাঁড়াবেন না।

চিকিৎসা
মূল রোগের চিকিৎসা: যদি হাইপোটেনশন কোনো রোগের কারণে হয় (যেমন ডায়াবেটিস, ইনফেকশন), তাহলে সেই রোগের চিকিৎসা করতে হবে।

রক্তচাপ বাড়ানোর ওষুধ: কোনো কোনো ক্ষেত্রে দৈনিক ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে।

জরুরি চিকিৎসা (শকের ক্ষেত্রে): হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিতে হবে। ইভি ফ্লুইডস ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

হাইপোটেনশনের জটিলতা
সব সময় হাইপোটেনশন বড় কোনো রোগের ইঙ্গিত নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি বিপজ্জনক হতে পারে।

আরও পড়ুন : গ্যাস ভেবে এড়িয়ে যাচ্ছেন? হতে পারে গলব্লাডার ক্যানসার

আরও পড়ুন : হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ে যা জানা জরুরি

সম্ভাব্য জটিলতা

পড়ে যাওয়া বা ব্যালেন্স হারানো: মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতে পারেন, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে।

শক: যখন রক্তচাপ এত কমে যায় যে অঙ্গগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। লক্ষণগুলো:

-ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে ত্বক

-দ্রুত বা অনিয়মিত হার্টবিট

-দ্রুত শ্বাস নেওয়া

শকের লক্ষণ দেখলে দ্রুত হাসপাতালে যান।

সূত্র: হেলথলাইন

সতর্কতা: এ প্রতিবেদনটি একটি সাধারণ বিশ্লেষণ। অবশ্যই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *