
কিডনিতে পাথর বা কিডনি স্টোন হলো খনিজ পদার্থের জমাট, যা কিডনিতে তৈরি হয়ে মূত্রনালীর মাধ্যমে বের হওয়ার সময় তীব্র যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও জিনগত কারণ ও শারীরিক অসুস্থতা এর সঙ্গে জড়িত, তবুও খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার ভূমিকা
সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত পানি পান, লবণ ও প্রাণিজ প্রোটিন কম খাওয়া এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। তাই সচেতনতা এবং সহজ কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমেই এ সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়।
গবেষণায় যা জানা গেছে
“কিডনি স্টোন প্রিভেনশন” শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কিডনি স্টোন প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন অত্যন্ত কার্যকর। পর্যাপ্ত পানি পান, সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম গ্রহণ, অক্সালেট ও সোডিয়াম কমানো এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা কিডনির জন্য উপকারী। বিশেষ করে ফল ও শাকসবজি সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস এ ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
প্রতিদিন অন্তত ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। এতে মূত্র পাতলা থাকে এবং পাথর তৈরির ঝুঁকি কমে। পানিতে লেবুর রস মেশালে সাইট্রেট বাড়ে, যা পাথর গঠনে বাধা দেয়।
লবণ কম খান
অতিরিক্ত লবণ খেলে প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিপস, আচার ও অতিরিক্ত টেবিল সল্ট এড়িয়ে চলা উচিত। প্রতিদিন ১,৫০০ থেকে ২,০০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ নিরাপদ।
প্রাণিজ প্রোটিন সীমিত করুন
অতিরিক্ত মাংস, মুরগি বা মাছ খেলে প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম ও ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়ে। পরিবর্তে শিম, ডাল, ছোলা বা টোফুর মতো উদ্ভিজ্জ প্রোটিন গ্রহণে জোর দেওয়া উচিত।
যথেষ্ট ক্যালসিয়াম খান
অনেকে মনে করেন ক্যালসিয়াম খেলে পাথর হয়, কিন্তু আসলে যথেষ্ট ক্যালসিয়াম খেলে অন্ত্রে অক্সালেটের শোষণ কমে এবং ঝুঁকি কমে। দুধ, দই, সবুজ শাক ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি।
অক্সালেটযুক্ত খাবার কমান
অক্সালেট ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিশে পাথর তৈরি করে। পালং শাক, বিট, বাদাম, চকলেট ও রhubarb বেশি না খাওয়াই ভালো। তবে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের সঙ্গে খেলে ঝুঁকি কিছুটা কমে।
পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান
পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের প্রভাব কমায় এবং কিডনিকে সুরক্ষা দেয়। কলা, কমলা, টমেটো, আলু এসব খাবারে পটাশিয়াম প্রচুর থাকে।
অতিরিক্ত ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীরে অক্সালেটে পরিণত হয়, যা পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সুস্থ ওজন বজায় রাখুন
অতিরিক্ত ওজন কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যাভ্যাস ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন
সফট ড্রিংকস ও হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপযুক্ত পানীয় কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়ায়। পরিবর্তে পানি, হারবাল চা বা চিনি ছাড়া পানীয় পান করা উচিত।
ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি এবং সম্ভব হলে ক্যালসিয়াম খাবার থেকেই গ্রহণ করা উচিত।
চিকিৎসকরা বলছেন, সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাই কিডনিকে পাথরের হাত থেকে বাঁচানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।