যে গোপন লক্ষণ গুলো কিডনি বিপদের সিগন্যাল দিচ্ছে!

কিডনি আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন করে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। কিডনি যখন ধীরে ধীরে তার কার্যকারিতা হারাতে শুরু করে, তখন শরীর কিছু সতর্ক সংকেত দিতে শুরু করে।

অনেকেই এই লক্ষণগুলোকে সাধারণ ক্লান্তি বা অন্য কোনো ছোটখাটো সমস্যা মনে করে উপেক্ষা করেন। কিন্তু সময়মতো এই লক্ষণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।

আপনার শরীর কীভাবে কিডনির বিপদের সংকেত দিচ্ছে, তা এখানে তুলে ধরা হলো:

১. প্রচণ্ড ক্লান্তি ও দুর্বলতা
কিডনি রোগের একটি প্রধান লক্ষণ হলো দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি। কিডনি যখন সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন রক্তে টক্সিন এবং বর্জ্য পদার্থ জমা হতে শুরু করে। এর ফলে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং আপনি দুর্বলতা অনুভব করেন। এই ধরনের ক্লান্তি সাধারণ ক্লান্তির চেয়ে ভিন্ন হয় এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলেও তা দূর হয় না।

২. চোখ, মুখ বা পা ফুলে যাওয়া
কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও সোডিয়াম বের হতে পারে না। ফলে এই তরল পদার্থগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে জমা হতে শুরু করে, যা ফোলাভাব সৃষ্টি করে। বিশেষ করে চোখের নিচে, মুখ, হাত, পা এবং গোড়ালিতে এই ফোলাভাব দেখা যায়। একে ইডিমা বলা হয়। যদি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আপনার চোখ ফোলা থাকে এবং সারা দিন ধরেও তা না কমে, তবে তা কিডনি রোগের একটি গুরুতর লক্ষণ হতে পারে।

৩. প্রস্রাবে পরিবর্তন
প্রস্রাব হলো কিডনির কার্যকারিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। কিডনি দুর্বল হলে প্রস্রাবের পরিমাণ, রং বা ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিবর্তন আসে। যেমন:

ঘন ঘন প্রস্রাব: বিশেষ করে রাতে বারবার প্রস্রাব করতে যেতে হয়।

কম প্রস্রাব: প্রস্রাবের পরিমাণ হঠাৎ কমে যাওয়া।

ফেনাযুক্ত প্রস্রাব: প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা বা বুদবুদ দেখা যাওয়া, যা প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।

৪. ত্বক শুষ্ক ও চুলকানি
যখন কিডনি শরীর থেকে টক্সিন ও বর্জ্য পদার্থ বের করতে পারে না, তখন তা রক্তে জমা হতে শুরু করে। এর ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায় এবং সারা শরীরে চুলকানি দেখা দেয়। এই লক্ষণটি প্রায়শই অন্যান্য চর্মরোগের মতো মনে হলেও, এর পেছনে কিডনি সমস্যা থাকতে পারে।

৫. ক্ষুধামন্দা ও বমি ভাব
রক্তে বর্জ্য পদার্থ জমা হওয়ার কারণে পেটে অস্বস্তি, বমি বমি ভাব এবং খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হয়। এর ফলে হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে পারে। মুখে একটি অপ্রীতিকর ধাতব স্বাদও অনুভব করা যেতে পারে।

৬. পিঠে ব্যথা
কিডনির অবস্থান পিঠের নিচের দিকে। কিডনির গুরুতর সংক্রমণ বা প্রদাহ হলে পিঠের মাঝখানে বা নিচের দিকে হালকা থেকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা অনেক সময় কোমরের ব্যথার মতো মনে হলেও, এর উৎস কিডনি হতে পারে।

যদি আপনি উপরের লক্ষণগুলোর কোনোটি অনুভব করেন, বিশেষ করে যদি তা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে দেরি না করে দ্রুত একজন নেফ্রোলজিস্ট বা কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে কিডনির মারাত্মক ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *