গবেষকদের নতুন তথ্য: ডিম আগে না মুরগি? এই বিতর্ক এবার চিরতরে শেষ!

ইতিহাসের অন্যতম পুরোনো একটি ধাঁধা হলো, ডিম আগে এসেছে নাকি মুরগি? আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি অন্তহীন চক্র মনে হলেও, বিবর্তন এবং আণবিক জীববিজ্ঞান বিষয়ক সাম্প্রতিক গবেষণা এই রহস্যের জট খুলতে সাহায্য করেছে।

×
প্রাচীন প্রাণীদের গবেষণা, জিনগত পরিবর্তন এবং ডিমের খোসার রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করে ডিম ও মুরগির বিবর্তন সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেছে। যদিও প্রশ্নটি অদ্ভুত মনে হতে পারে, এর মূল নিহিত আছে জীববিজ্ঞানে, যেখানে বৈশিষ্ট্যগুলো ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়।

ডিমের উৎপত্তি এবং গঠন

ডিমকে একটি ঝিল্লি-আবদ্ধ আধার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যার মধ্যে একটি ভ্রূণ বিকশিত হয়। প্রাণিজগতে এর অস্তিত্ব সর্বত্র দেখা যায়। প্রায় ৩৪০ মিলিয়ন বছর আগে অ্যামনিওটা (amniotes) প্রজাতির বিবর্তনের মাধ্যমে প্রথম ডিমের উৎপত্তি হয়। এই মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ডিমের বাইরের দিকে অতিরিক্ত ঝিল্লির মতো গঠন ছিল, যেমন কোরিয়ন, অ্যামনিওটিক ঝিল্লি এবং অ্যালান্টোয়েস— যা ভ্রূণকে পানির পরিবর্তে মাটিতে বিকশিত হতে সাহায্য করত। তার আগে বেশিরভাগ প্রাণীই পানিতে প্রজনন করত এবং ডিমকে শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য পুকুর বা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ডিম পাড়ত।

প্রথম মুরগি কবে এল?
গৃহপালিত মুরগির উৎপত্তির ওপর গবেষণায় অনুমান করা হয় যে, তারা প্রায় ৫৮,০০০ বছর আগে তাদের বুনো পূর্বপুরুষ, যেমন লাল জাঙ্গলফাউল (red junglefowl) এবং সম্ভবত কিছু সংকর পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে। এর অর্থ, মুরগি প্রজাতি হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাসে তুলনামূলকভাবে নতুন।

অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সের মতে, প্রথম মুরগিটি দুটি পাখির নিষিক্ত ডিমে জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে এসেছিল, যা প্রায় মুরগির মতোই ছিল, কিন্তু পুরোপুরি মুরগি নয়। এই দুটি “প্রোটো-চিকেন” (Proto-chickens) বা প্রায়-মুরগি যখন মিলিত হয়েছিল, তখন তাদের ডিএনএ একত্রিত হয়ে ভ্রূণের প্রথম কোষে একটি ক্ষুদ্র জিনগত পরিবর্তন বা মিউটেশন তৈরি হয়। ভ্রূণটি বড় হওয়ার সাথে সাথে সেই মিউটেশন প্রতিটি কোষে অনুলিপি হয়, যা শেষ পর্যন্ত আমরা যাকে এখন প্রথম আসল মুরগি হিসেবে চিনি, তাতে বিকশিত হয়।

কী কারণে ‘মুরগির ডিম’ বিশেষ?
শেফিল্ড এবং ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মুরগির ডিমের খোসা তৈরির আণবিক রহস্য উন্মোচন করেছেন। এই প্রক্রিয়ায় ওভোক্লিডিন-১৭ (OC-17) নামক একটি প্রোটিন কাজ করে, যা মুরগির ডিমের খোসার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

‘অ্যাঙ্গেওয়ান্ডটে কেমি ইন্টারন্যাশনাল এডিশন’ নামের জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে, কীভাবে OC-17 নামক একটি প্রোটিন ডিমের খোসা গঠনে সাহায্য করে। এই প্রোটিনটির বিশেষ আণবিক “আঙুল” রয়েছে, যা ক্যালসিয়াম কার্বনেট কণাগুলোকে আঁকড়ে ধরে এবং ক্যালসাইট স্ফটিক গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে, যা ডিমের খোসার মূল গঠন উপাদান।

যেহেতু OC-17 শুধুমাত্র মুরগির দ্বারা উৎপাদিত হয়, তাই এই প্রোটিনযুক্ত একটি “আসল মুরগির ডিম” কেবলমাত্র একটি মুরগিই পাড়তে পারে। একটি প্রোটো-পাখি বা “প্রায়-মুরগি”-র ডিম আজকের মুরগির ডিমের মতো রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করবে না।

তাহলে, ডিম নাকি মুরগি, কে আগে এসেছিল?
বিবর্তনগত ইতিহাসে ডিম, বিশেষ করে অ্যামনিওটিক ডিম এবং এর আগের ডিমের ধরন, মুরগির বিবর্তনের অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। প্রথম যে প্রাণীটিকে আমরা মুরগি বলতে পারি, সেটি এসেছিল একটি ডিম থেকে, যা দুটি প্রোটো-মুরগি বা তাদের ঘনিষ্ঠ পূর্বপুরুষরা পেড়েছিল। সেই ডিমের ভেতরে জিনগত পরিবর্তনের ফলেই প্রথম আসল মুরগির জন্ম হয়। এর মানে হলো, নির্দিষ্টভাবে মুরগির ডিমের জন্য মুরগির অস্তিত্ব থাকা আবশ্যক।

সুতরাং, ডিমই আগে এসেছিল, কিন্তু মুরগির ডিম নয়!

যদি “ডিম” বলতে বিবর্তনের ইতিহাসে যেকোনো ডিম বোঝানো হয়, তবে ডিম স্পষ্টভাবে আগে এসেছিল। কিন্তু যদি “ডিম” বলতে মুরগির ডিএনএ এবং মুরগির নির্দিষ্ট ডিমের খোসার প্রোটিনযুক্ত মুরগির ডিম বোঝানো হয়, তাহলে সেটির আবির্ভাব ঘটেছে প্রথম মুরগির জন্মের পরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *