
দেশের ব্যাংক খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে সবচেয়ে বড় ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারীদের সুরক্ষায় ইতোমধ্যেই একটি বিশেষ পেমেন্ট স্কিম প্রণয়ন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একীভূত পাঁচ ইসলামী ব্যাংকগুলো হচ্ছে: ১. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ২. গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ৩. ইউনিয়ন ব্যাংক, ৪. সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৫. এক্সিম ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে। এর বিপরীতে ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তি আমানতকারীদের অর্থ প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী—
২ লাখ টাকার মধ্যে আমানত: বীমার আওতায় দ্রুত ফেরত দেওয়া হবে।
২ লাখ টাকার বেশি আমানত: ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়া হবে (সময়সীমা এখনও নির্ধারিত নয়)।
ফেরতের সময় ৪% হারে রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে, তবে বিদ্যমান সব আমানত স্কিম বাতিল হবে।
একজন গ্রাহকের একাধিক ব্যাংকে হিসাব থাকলেও তা একটি হিসেবে গণনা হবে এবং বীমা সীমা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকার মধ্যে থাকবে।
অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীরা নগদ অর্থের বদলে নতুন ব্যাংকের শেয়ার পেতে পারেন। ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না, কিস্তি আগের নিয়মে চালাতে হবে।
একীভূত ব্যাংকের সম্পদ দাঁড়াবে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে—
২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার,
১০ হাজার কোটি টাকা আসবে ডিপোজিট ইনসুরেন্স ফান্ড থেকে,
৫ হাজার কোটি টাকা দেবে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা।
পাঁচ ব্যাংকই বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। তবে একীভূত হওয়ার পর এগুলো ডিলিস্ট করা হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইনে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী নন, তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক বিকল্প ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
একীভূতকরণের ঘোষণার পর শেয়ারবাজারে বড় ধস নেমেছে। পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারের দাম ফেইস ভ্যালুর (১০ টাকা) অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ডজনখানেক ব্যাংকের শেয়ার ১০ টাকা ফেইস ভ্যালুর ওপরে লেনদেন হচ্ছে।
একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর এমডি বদলে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। তারা আর্থিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন করবেন, স্থিতিশীলতা রক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনে নির্বাহী পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখবেন। প্রশাসকদের শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে দক্ষ হতে হবে অথবা বিশেষজ্ঞ নিয়োগের অনুমতি থাকতে হবে।
সব মিলিয়ে এই একীভূতকরণ দেশের ব্যাংক খাতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে, যার ওপর আমানতকারীদের আস্থা ও বিনিয়োগকারীদের মনোভাব অনেকটাই নির্ভর করবে।