বাংলাদেশে কোটিপতির ঝড়! জানুন ব্যাংকে কারা জমাচ্ছেন কোটি কোটি টাকা

দেশের ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানতধারী হিসাবের সংখ্যা আবারও বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে যেখানে এ ধরনের হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি, জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টিতে। অর্থাৎ তিন মাসে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৯৭৪টি কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট হিসাব দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৬৭১টিতে। মার্চে এ সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৮২১টি। অর্থাৎ তিন মাসে নতুন করে যোগ হয়েছে প্রায় ৩২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫০টি হিসাব। একই সময়ে আমানতের পরিমাণও বেড়েছে। মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর মোট আমানত ছিল ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। তিন মাসে আমানত বেড়েছে প্রায় ৭৩ হাজার ৭৫ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, কোটি টাকার বেশি আমানতধারী হিসাবগুলোতে জমার পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চ শেষে এসব অ্যাকাউন্টে আমানত ছিল ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। জুন শেষে তা বেড়ে হয় ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে কোটিপতি হিসাবগুলোতে জমা বেড়েছে প্রায় ৯৭ হাজার ১১৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই সব ব্যক্তি কোটিপতি নন। অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও এখানে অর্থ জমা রাখে। একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একাধিক কোটি টাকার অ্যাকাউন্টও থাকতে পারে।

কোটিপতি হিসাব বৃদ্ধির এ ধারা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটি টাকার আমানতকারী ছিল মাত্র ৫ জন। ১৯৭৫ সালে সংখ্যা বেড়ে হয় ৪৭, ১৯৮০ সালে ৯৮ এবং ১৯৯০ সালে তা হয় ৯৪৩টি। ১৯৯৬ সালে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৯৪টিতে, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২ এবং ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টিতে। ২০০৮ সালে সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১৬৩টিতে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেশে কোটি টাকার হিসাব ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয় ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬টি, ২০২২ সালে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে হয় ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২১ হাজার ৮১টিতে। চলতি বছরের মার্চ শেষে ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি, যা জুন শেষে বেড়ে হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টিতে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ব্যাংক খাতে কোটিপতি বাড়া দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক। এটি প্রমাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থের প্রবাহ বাড়ছে এবং আমানত রাখার সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে শুধু ধনী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আমানত বৃদ্ধি নয়, সাধারণ জনগণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করাও জরুরি বলে তারা মত দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধির এ প্রবণতা বর্তমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি ও আর্থিক খাতের সম্প্রসারণকে নির্দেশ করছে। তবে এর সঙ্গে অর্থনীতিতে বৈষম্য আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বিদ্যমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *