সকালে যে কাজগুলো করলে কিডনি থাকবে সুস্থ

মানুষের শরীরের সুস্থতার জন্য কিডনির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি আমাদের দেহের ভেতরে ফিল্টারের মতো কাজ করে। প্রতিদিন খাবার ও পানীয় থেকে আমরা নানা উপাদান গ্রহণ করি।

এগুলোর মধ্যে কিছু অংশ শরীর কাজে লাগায়, আর অতিরিক্ত বা ক্ষতিকর অংশগুলো কিডনি ফিল্টার করে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। তাই কিডনি সুস্থ রাখা মানে পুরো শরীরকেই সুস্থ রাখা।

এই সুস্থতার অন্যতম সহজ উপায় হলো পানি পান করা, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা। ঘুমের সময় দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা শরীর কোনো পানি পায় না। এই সময়ে শরীরের ভেতরে পানির ঘাটতি তৈরি হয়।

অনেকেই সকালে উঠে প্রথমেই চা বা কফি খেয়ে থাকেন, কিন্তু এর আগে যদি এক বা দুই গ্লাস বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার অভ্যাস করা যায় তাহলে কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ আরও ভালোভাবে করতে পারে।

পানি কিডনিকে সক্রিয় করে এবং সারা দিনের কাজের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। সকালে পানি পান করার ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে। এর মাধ্যমে শরীরের ভেতরে জমে থাকা টক্সিন বা ক্ষতিকর উপাদান দ্রুত বের হয়ে যায়।

যারা সকালে নিয়মিত পানি পান করেন তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক কম থাকে। কারণ পানি প্রস্রাবকে পাতলা করে এবং ক্যালসিয়াম বা অন্যান্য খনিজ পদার্থ জমতে দেয় না। আবার দীর্ঘ সময় পানি না খেলে প্রস্রাব ঘন হয়ে যায়, তখন কিডনির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং ধীরে ধীরে সমস্যা তৈরি হয়।

কিডনি সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে সকালে পানি পান শুধু শরীরকে হাইড্রেট করে না, রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখে। পানি রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখে এবং কিডনির রক্তনালীতে চাপ কমায়। যারা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী। কারণ এসব রোগের কারণে কিডনির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রতিদিন সকালে পানি খেলে সেই ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমে যায়।

পানি খাওয়ার অভ্যাস মানসিক সতেজতারও জন্ম দেয়। অনেক সময় সকালে ঘুম থেকে উঠলে শরীর ভারী বা ক্লান্ত লাগে। কিন্তু খালি পেটে এক-দুই গ্লাস পানি খেলে শরীর দ্রুত চাঙা হয়ে ওঠে। কিডনি তরল গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করে এবং শরীরের ভেতর জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় পদার্থ দূর করে। এর ফলে দিনের শুরুটা হয় সতেজ ও সক্রিয়ভাবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিদিন শরীরের ওজন ও কাজের ধরণ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পান করা উচিত। তবে সকালে অন্তত এক থেকে দুই গ্লাস পানি খাওয়া সকলের জন্যই উপকারী। এটি শুধু কিডনির জন্য নয়, হজমতন্ত্র, লিভার ও ত্বকের জন্যও উপকার বয়ে আনে। তবে খুব ঠান্ডা পানি না খেয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার বা হালকা গরম পানি খাওয়া ভালো। এতে হজম সহজ হয় এবং কিডনিও আরাম পায়।

অনেকে মনে করেন কেবল সারাদিন পানি খেলেই যথেষ্ট, কিন্তু সকালে পানি খাওয়ার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। রাতভর কিডনি ধীরে ধীরে কাজ করেছে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে কিছু বর্জ্য জমা হয়েছে। সকালে পানি খেলে এগুলো সহজে বের হয়ে যায় এবং কিডনির কার্যক্রম নতুন উদ্যমে শুরু হয়। এ সময় পানি খাওয়া কিডনিকে বিশ্রাম দেওয়ার মতোই কাজ করে।

এছাড়া সকালে পানি খাওয়ার আরেকটি বড় উপকার হলো শরীরের অম্লতা কমানো। ঘুমের সময় পাকস্থলীতে কিছু এসিড জমে থাকে। খালি পেটে পানি খেলে সেটি পাতলা হয় এবং শরীরের সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষা পায়। এসিডের মাত্রা কমলে কিডনির কাজও সহজ হয়।

অন্যদিকে, যদি কেউ সকালে পানি না খেয়ে দীর্ঘ সময় কাটায়, তবে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। এতে প্রস্রাব ঘন হয়, কিডনি বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য হয় এবং দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। তাই সকালে পানি খাওয়াকে শুধু অভ্যাস নয়, কিডনি রক্ষার অন্যতম সহজ চিকিৎসা বলা যায়।

কিডনি আমাদের শরীরের নিঃশব্দ শ্রমিক। প্রতিদিন নিরলসভাবে এটি শরীরকে সুস্থ রাখে। কিন্তু আমরা অনেক সময় এর যত্ন নিতে ভুলে যাই। খুব অল্প পরিশ্রমেই কিডনিকে সুস্থ রাখা সম্ভব, আর সেটি হলো নিয়মিত পানি পান করা। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করলে কিডনি থাকবে সতেজ, শরীর থাকবে প্রাণবন্ত। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে আজ থেকেই সকালে পানি খাওয়ার অভ্যাস শুরু করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *