
বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে কোলন ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। ক্যানসারজনিত মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ এই রোগটি আগে মূলত ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে দেখা যেত। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, ১৯৯০ সালে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি ১৯৫০ সালে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় দ্বিগুণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বে ১৯ লাখ নতুন কোলোরেক্টাল ক্যানসার রোগী শনাক্ত হয় এবং ৯ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৪০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা বেড়ে বছরে ৩২ লাখ নতুন রোগী এবং ১৬ লাখ মৃত্যুর পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। যদিও বংশগত কারণ এবং পরিবারিক ইতিহাস ভূমিকা রাখে, তবুও কিছু ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করে কোলন ক্যানসারের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায়।
নিয়ন্ত্রণযোগ্য ৫ ঝুঁকির কারণ ও করণীয়
১. অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
শরীরের অতিরিক্ত চর্বি শুধু সৌন্দর্য নষ্ট করে না, এটি দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, স্থূলতা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে, কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায় এবং কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
করণীয়: অতিরিক্ত ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করুন।
২. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অতিরিক্ত লাল মাংস (গরু, খাসি, শূকর বা লিভার) এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস (হটডগ, সসেজ ইত্যাদি) খেলে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে অতিরিক্ত তাপে ভাজা, গ্রিল বা ব্রয়েল করা খাবার ঝুঁকি আরও বাড়ায়।
করণীয়: বেশি করে শাকসবজি, ফল, শস্যজাতীয় খাবার খান এবং লাল মাংস ও চিনিযুক্ত পানীয় সীমিত করুন।
৩. অলস জীবনধারা
শারীরিক পরিশ্রমহীন জীবন কোলন ক্যানসারের বড় ঝুঁকি। WHO জানিয়েছে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ৫০% পর্যন্ত কোলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
করণীয়: সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করুন, যেমন হাঁটা বা সাইক্লিং। ছোট পরিবর্তন-যেমন লিফট বাদ দিয়ে সিঁড়ি ব্যবহার করাও উপকারী।
৪. ধূমপান
WHO-এর তথ্যমতে, বিশ্বে মোট ক্যানসারজনিত মৃত্যুর ২৫% এর জন্য দায়ী তামাক। দীর্ঘমেয়াদি ধূমপায়ীদের কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
করণীয়: ধূমপান ছেড়ে দিন। প্রয়োজনে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, কাউন্সেলিং বা সাপোর্ট গ্রুপের সাহায্য নিন।
৫. মদ্যপান
আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা সংস্থা (IARC) অ্যালকোহলকে গ্রুপ-১ কার্সিনোজেন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিয়ার, ওয়াইন কিংবা স্পিরিট-সব ধরনের অ্যালকোহল কোলনসহ অন্তত সাত ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত মদ্যপায়ীদের ঝুঁকি সাধারণ মানুষের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি।
করণীয়: অ্যালকোহল পান সম্পূর্ণভাবে বাদ দিন। প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওজন নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম, ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা-এসব জীবনধারার পরিবর্তন কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।