
সুস্থ খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের প্রচলনের ফলে অনেকেই খাবারে ‘স্বাস্থ্যকর’ উপাদান যোগ করছেন। তবে কার্ডিওলজিস্ট ডা. দিমিত্রি ইয়ারানোভ (এমডি, কার্ডিওলজি) জানিয়েছেন, এমন একটি উপাদান আছে যেটি আমরা অজান্তেই প্রতিদিন খাচ্ছি, যা কোলেস্টেরলের চেয়েও বেশি নীরবে হৃদযন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সেটি হলো-চিনি।
কোলেস্টেরল নয়, হৃদযন্ত্রের আসল ক্ষতিকারক চিনি
ডা. ইয়ারানোভ বলেন, হৃদরোগ শুধু কোলেস্টেরল থেকে হয় না। পানীয়, নাশতা, সস এমনকি ‘স্বাস্থ্যকর’ নামধারী অনেক খাবারেই লুকিয়ে থাকে চিনি, যা হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে এবং ডায়াবেটিস বাড়াচ্ছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, প্রতিদিন মাত্র একটি পরিবেশন চিনি গ্রহণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৮ শতাংশ বেড়ে যায়। আর দুই পরিবেশন বা তার বেশি খেলে ঝুঁকি বেড়ে দাঁড়ায় ২১ শতাংশে-এমনকি যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের ক্ষেত্রেও।
‘চিনির কারণে বছরে ১০ লাখের বেশি নতুন হার্ট রোগী’
ডা. ইয়ারানোভ জানান, ২০২৫ সালের গবেষণা অনুযায়ী, অতিরিক্ত চিনি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৭ শতাংশ, করোনারি ধমনির রোগের ঝুঁকি ২৩ শতাংশ, এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি ৯ শতাংশ বাড়ে।
তিনি উল্লেখ করেন, “বিশ্বজুড়ে চিনির কারণে বছরে ১০ লাখেরও বেশি নতুন হৃদরোগীর সংযোজন হচ্ছে। একইসঙ্গে হচ্ছে প্রায় ২২ লাখ নতুন টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী।”
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের JAMA Internal Medicine সাময়িকীর এক গবেষণায় দেখা গেছে-যারা দৈনিক ক্যালরির ২৫ শতাংশ বা তার বেশি চিনি থেকে পান, তাদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে যায়, তুলনায় যারা ১০ শতাংশের কম ক্যালরি চিনি থেকে নেন।
চিনি কীভাবে ক্ষতি করে?
ডা. ইয়ারানোভ ব্যাখ্যা করেন, চিনি প্রদাহ বাড়ায়, রক্তচাপ বাড়ায়, কোলেস্টেরল খারাপ করে এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটায়-যা হৃদযন্ত্র ও অগ্ন্যাশয়ের জন্য দ্বিগুণ বিপদ।
কতটা চিনি খাওয়া উচিত?
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ অনুযায়ী দৈনিক চিনি গ্রহণের সীমা:
নারী: সর্বোচ্চ ৬ চা-চামচ (প্রায় ১০০ ক্যালোরি), পুরুষ: সর্বোচ্চ ৯ চা-চামচ (প্রায় ১৫০ ক্যালোরি)।
ডা. ইয়ারানোভ সতর্ক করেন, “অধিকাংশ মানুষ অজান্তেই এর ২-৩ গুণ বেশি চিনি খেয়ে ফেলছেন। তাই খাবারের লেবেল পড়ুন, সীমিত রাখুন। হৃদযন্ত্র ও রক্তে শর্করা রক্ষায় সচেতন হোন।”
সূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস।