পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান বাংলাদেশের

১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ঐতিহাসিক অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রোববার (২৪ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। রোববার ঢাকার একটি হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বৈঠক করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া এবং অভিন্ন স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে সহযোগিতামূলক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করার ওপর জোর দেন।

বৈঠকে উভয় পক্ষ পারস্পরিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে খোলামেলা ও গঠনমূলক আলোচনা করেছে এবং বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, যোগাযোগ, জনগণের সঙ্গে জনগণের সংযোগ, সংস্কৃতি, পর্যটন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ সব সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।

বৈঠকে বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে অব্যবহৃত সম্ভাবনা উন্মোচনের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়। তারা এই ক্ষেত্রে নিয়মিত কূটনৈতিক এবং খাতভিত্তিক যোগাযোগের গুরুত্ব স্বীকার করে।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ, সমুদ্র সংযোগ উন্নত করা এবং বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে উভয় পক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের চালানো গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া, সম্পদের বণ্টন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের শিকারদের জন্য আসা বৈদেশিক সাহায্য হস্তান্তর, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনসহ দীর্ঘ অমীমাংসিত ঐতিহাসিক বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ স্থায়ী এবং দূরদর্শী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপনের লক্ষ্যে দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পাকিস্তান-বাংলাদেশ নলেজ করিডোর চালু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যার অধীনে আগামী পাঁচ বছরে পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ৫০০ বৃত্তি দেওয়া হবে।

এই বৃত্তির এক-চতুর্থাংশ চিকিৎসাক্ষেত্রে দেওয়া হবে। তিনি জুলাই বিদ্রোহের সময় আহত ৪০ জন শিক্ষার্থী ও ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপনসহ উন্নত চিকিৎসা প্রদানের জন্য পাকিস্তানের প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন। পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে হকি দলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

বৈঠকে তারা আশা প্রকাশ করেন, শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়া এবং তার বাইরেও শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। তারা পারস্পরিক স্বার্থ এবং উদ্বেগের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।

বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের অব্যাহত সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *