কিডনির ‘গোপন রক্ষক’ আপনার রান্নাঘরেই!

আমাদের কিডনি দিন-রাত নিরলসভাবে কাজ করে শরীর থেকে টক্সিন ছেঁকে বের করে এবং দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে। তবে অনেক সময় কিডনির যত্ন সেভাবে নেওয়া হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আয়ুর্বেদে উল্লেখিত কিছু ভেষজ উপাদান প্রাকৃতিকভাবে কিডনিকে পরিষ্কার ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করতে পারে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদনে পাঁচটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানকে কিডনি ক্লিনজার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আদা (Ginger)
আদা শুধু রান্নাঘরের পরিচিত উপাদান নয়, বরং এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বা প্রদাহনাশক গুণ, যা কিডনিকে সুরক্ষা দিতে কার্যকর। নিয়মিত আদা খেলে কিডনির প্রদাহ কমে এবং টিস্যু ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস পায়। এছাড়া আদা হজমশক্তি বাড়ায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আদায় থাকা ‘Zingerone’ নামক যৌগ কিডনিকে ওষুধজনিত ক্ষতির হাত থেকেও সুরক্ষা দিতে পারে।

মার্শম্যালো রুট (Marshmallow Root)
বৈজ্ঞানিকভাবে Althaea officinalis নামে পরিচিত এই ভেষজটি মূত্রনালি ও কিডনির জন্য উপকারী। এটি মিউকাস মেমব্রেনের ফোলা কমাতে সাহায্য করে এবং ডাইইউরেটিক হিসেবে কাজ করে, যা প্রস্রাবের প্রবাহ বাড়িয়ে শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়তা করে। তবে কিডনির জন্য এর উপকারিতা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

গিলয় (Giloy)
আয়ুর্বেদে বহুল ব্যবহৃত গিলয় (Tinospora cordifolia) কিডনি সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যালকালয়েড ও গ্লাইকোসাইড, যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। গিলয় প্রাকৃতিক ডাইইউরেটিক হিসেবে কাজ করে, যা অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড ও লবণ বের করে দেয়, ফলে কিডনিতে পাথর ও গাউটের ঝুঁকি কমে। তবে এটি গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ধনেপাতা (Coriander)
ধনেপাতা শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, বরং কিডনিকে ডিটক্সিফাই করতেও সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ডাইইউরেটিক হিসেবে কাজ করে, যার ফলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ সহজে বের হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ধনেপাতা কিডনিতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে এবং ভারী ধাতুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।×

নেটল পাতা (Nettle Leaf)
‘জার্নাল অব নেফ্রোলজি’-এর এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘ ছয় মাস নেটল পাতার চা পান করলে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কমে, যা কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। নেটল পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রদাহনাশক ও ডাইইউরেটিক গুণাবলী কিডনি সুস্থ রাখতে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানগুলো সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। তবে যেকোনো ভেষজ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *