যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস’

বাংলাদেশ নৌ ও বিমানবাহিনীর দেশপ্রেমিক, মেধাবী, দক্ষ, পেশাদার, সৎ, মানবিক এবং নৈতিক গুণাবলীসম্পন্ন যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার নৌবাহিনী সদর দপ্তরে ‘নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী নির্বাচনী পর্ষদ-২০২৫’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে তিনি এ নির্দেশ দেন।

এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন হতে কমডোর, কমান্ডার হতে ক্যাপ্টেন ও লে. কমান্ডার হতে কমান্ডার এবং বিমানবাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন হতে এয়ার কমডোর, উইং কমান্ডার হতে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এবং স্কোয়াড্রন লিডার হতে উইং কমান্ডার পদবিতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এ পর্ষদ, সরকারের অনুমোদনসাপেক্ষে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ভবিষ্যৎ জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা নির্বাচন করবেন।

রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

এতে বলা হয়- অনুষ্ঠানের শুরুতেই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সংঘটিত মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পাশাপাশি নির্বাচনী পর্ষদ-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর বীর সদস্য, সকল শ্রেণি-পেশার মুক্তিকামী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদদের।

তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস, সংগ্রাম ও বীরত্বের কথা স্মরণসহ শান্তিকালীন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং জাতীয় প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এছাড়া দেশের সার্বভৌমত্ত্ব রক্ষায় ও নানা সংকটে; বিশেষত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে দেশের নিরাপত্তা সংকটে দেশের আপামর জনসাধারণের পাশে দাঁড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দেশ গঠনে উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করে দেশের মানুষের ভালোবাসা ও পরম নির্ভরতা অর্জন করায় নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানান।

প্রধান উপদেষ্টা দেশের সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষণ ও আহরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র গভীর সমুদ্র বন্দরের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবদান এবং সার্বিকভাবে সুনিল অর্থনীতির বিকাশে প্রয়োজনীয় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করেন।

পাশাপাশি তিনি দেশের সুনীল অর্থনীতির বিকাশে চলমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (MIDA) প্রতিষ্ঠা, উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের আলোকপাত করেন। এক্ষেত্রে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী কর্তৃক দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানসহ দেশমাতৃকার সেবায় ও সুরক্ষায় বাহিনী দ্বয়ের ভূমিকা ও সর্বোপরি সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী দেশের সংবিধান সমুন্নত রেখে যেকোনো রাষ্ট্রীয় সংকটে এবং দুর্যোগে আর্তমানবতার সেবায় জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এ ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।

পরিশেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নেতৃত্বে দেশপ্রেমিক, মেধাবী, দক্ষ, পেশাদার, সৎ, মানবিক এবং নৈতিক গুণাবলীসম্পন্ন যোগ্য কর্মকর্তাদের নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী পর্ষদকে যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করেন।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান। নির্বাচনী পর্ষদ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান এবং বিমান বাহিনী প্রধান শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও নৌবাহিনী সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে নির্বাচনী পর্ষদে সদয় উপস্থিতির জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

নৌ ও বিমানবাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার সম্পৃক্ততা ও দিকনির্দেশনা নৌ এবং বিমানবাহিনীর সদস্যদের কর্মস্পৃহা ও মনোবল বৃদ্ধি করেছে বলে তারা দৃঢ়বিশ্বাস ব্যক্ত করেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার মূল্যবান দিকনির্দেশনায় নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীতে নেতৃত্ব প্রদানে দেশপ্রেম, পেশাগত দক্ষতা, মানবিক ও অধিনায়কত্বের গুণাবলীর মাপকাঠিতে দক্ষ ও উপযুক্ত কর্মকর্তা নির্বাচনের মাধ্যমে সুদক্ষ বাহিনী গড়ে তোলার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান।

উল্লেখ্য, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সামরিক ও বেসামরিক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টা নৌবাহিনী সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে একটি বৃক্ষরোপণ করে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধি কামনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *