হঠাৎ ভারতীয় মিডিয়ায় ড. ইউনূস বন্দনা! নেপথ্যে কী?

কোন এক বিশেষ প্রাণীর লেজ নাকি কখনো সোজা হয় না, কিন্তু ভারতীয় দাদাবাবুদের মিডিয়া যেনো এক নিমিষেই কিছুটা সোজা হয়ে গেছে। যারা এক সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা আর সমালোচনায় মুখর থাকতো, আজ তারাই কি না মেতেছেন ড. ইউনূস বন্দনায়। বিষয়টা অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি।

ভারতীয় কোন মিডিয়া তুলে ধরছে, ড. ইউনূসের সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তো আবার কোন মিডিয়া সামনে আনছে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নানা ষড়যন্ত্রের গল্প। হাসিনার প্রশংসার ফুলঝুরি ছড়ানো ভারতীয় গোদি মিডিয়াগুলোর হঠাৎ করেই ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে ড. ইউনূসের সাফল্য কাহন তুলে ধরছে এখন। যা নিয়ে বাংলাদেশিদের মনে উকি দিচ্ছে নতুন সংশয়। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন এটা অনেকটা ঝোপ বুঝে কোপ মারার মত বিষয়।

সম্প্রতি ইটিভি নামে ভারতীয় স্যাটেলাইট টেলিভিশনটি তুলে ধরেছে গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু করে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ড. ইউনূসের নেতৃত্বে তার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে আসা বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগের কথা। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সময়ে বাংলাদেশে ৯ হাজার ২’শ ৪৭ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। আর চায়না থেকে ১০০টি সংস্থা প্রায় দেড়’শ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এসময় টেলিভিশনটি ড. ইউনূসের এই দূরদর্শিতার ভূয়সী প্রশংসা করে।

শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকেই ড. ইউনূসের প্রশংসা করছে না ভারতীয় মিডিয়া বরং তারা আওয়ামী লীগের পক্ষ ছেড়ে এখন কথা বলা শুরু করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের অনুকূলে। এই যেমন জি-২৪ এর মত ভারতীয় চ্যানেলে খুব আগ্রহ নিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাইরাল হওয়া ভিডিও। যে কি না ড. ইউনূসকে প্রকাশ্য হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। বিষয়টিকে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নেগেটিভ ভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে সেই প্রতিবেদনে।

শুধু এই দুইটি টেলিভিশনই নয়, রিপাবলিক বাংলার মতো প্রোপাগান্ডা ছড়ানো টেলিভিশনেও আজকাল মাঝেমধ্যেই দেখা মিলছে ড. ইউনূস বন্দনা। এভাবে ভারতীয় মিডিয়াগুলোর হঠাৎ স্বভাবজাত চরিত্র বদলে, তাই চারিদিকে প্রশ্নের ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। এভাবে প্রতিবেশীদের গণমাধ্যম গুলোর পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা তুলে ধরছেন বেশ কিছু বিষয়।

প্রথমত, ফ্যাসিস্ট হাসনার দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে বর্তমানে নিষিদ্ধ, আদৌ তারা কখনো রাজনীতি করতে পারবে কি না তারও কোন গ্যারান্টি নেই। আর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার বর্তমানে শক্ত অবস্থানে। এজন্যই এভাবে সুর পাল্টেছে ভারতীয় দাদাবাবুদের সংবাদ মাধ্যমগুলো। দ্বিতীয়ত, হাসিনার নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। প্রায় ২৫০টি হত্যা মামলার আসামীর পক্ষ নেওয়ায় ভারতীয় মিডিয়াগুলো নিজ দেশের জনগণের কাছেই ঘৃণার পাত্রে রূপান্তর হয় আর ধীরে ধীরে তাদের টিআরপি কমতে থাকে। টিআরপি বাড়ানোর জন্য হলেও ওরা ক্ষণিকের মত হাসিনার পক্ষ নিয়েছে।

তৃতীয়ত, ড. ইউনূস একজন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ। পশ্চিমা বিশ্বও ড. ইউনূসকে সমীহ করে চলে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন ব্যক্তিকে নিয়ে তাই নিজেদের নৈতিকতা থেকেও আর প্রোপাগান্ডা না ছড়িয়ে সত্যটা তুলে ধরে তাকে প্রশংসার জোয়ারে ভাসাচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া। চতুর্থত, এটা ভারতীয় মিডিয়াগুলোর নয়া ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে এমন কথাও উরিয়ে দিচ্ছে না বিশেষজ্ঞমহল। তাদের মতে, ওরা বর্তমান সমসাময়িক বিষয় চিন্তাভাবনা করেই ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতোই ড. ইউনূসের প্রশংসা করছে।

ফ্যাসিস্ট হাসিনা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে চোরের মত লেজ গুটিয়ে ভারতে পালিয়ে গেলে বাংলাদেশের হাল ধরেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূস। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারতীয় এসব গোদি মিডিয়াগুলো লেগে পড়ে তার সমালোচনা করতে। যত সব বানোয়াট, ভিত্তিহীন অপ্রাসাঙ্গিক মিথ্য প্রোপাগান্ডা ছড়াতে থাকে ড. ইউনূসকে নিয়ে। তবে এবার যেনো দাদাবাবুরা ঘুরে গেলো পুরো ৩৬০ ডিগ্রি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *