উপদেষ্টার বাড়িতে ১২০০ বস্তা চাল, আসল সত্য ফাঁস!

বাড়ির আঙিনায় ১২০০ বস্তা চাল। চারদিকে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, আর শিরোনামে একটাই নাম—আসিফ মাহমুদ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও ক্লিপে এমনই এক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যেন কোনো দুর্নীতির কেলেঙ্কারির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং পল্লী উন্নয়ন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

তবে বাস্তবতা এর ঠিক উল্টো মেরুতে।

ফেসবুকের আকাশে হঠাৎ ভেসে ওঠা এই ‘চাল-কাহিনি’ যে নিছকই একটি মনগড়া নাটক—তা পরিস্কার করেছেন উপদেষ্টা নিজেই। মঙ্গলবার (৩ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে এই গুজবের বিরুদ্ধে তিনি স্পষ্ট ও কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

গুজবের জন্ম: কে ছড়ালো, কেন ছড়ালো?

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, “উপদেষ্টার বাড়ি থেকে উদ্ধার ১২০০ বস্তা চাল। জবাব চাইলে তার বাবা পুলিশকে ঘুষ দিয়ে চুপ করাতে চান।”এই ‘তথ্য’ দ্রুত ভাইরাল হয়। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কেউ কেউ পোস্টটি শেয়ার করে মন্তব্যও করতে থাকেন।

কিন্তু উপদেষ্টার দাবি, এটি কোনো সাংবাদিক অনুসন্ধানের ফল নয়, বরং ‘নিষিদ্ধ’ একটি সংগঠনের সাইবার সেল থেকে পরিকল্পিতভাবে বানানো ও ছড়ানো একটি গুজব। উদ্দেশ্য একটাই—তাকে এবং তার পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় করা।

“আমার বাড়ি নয়, চাঁদপুরের শাহরাস্তি”

আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, “চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তির একটি ঘটনা—যার সঙ্গে আমার পরিবার কিংবা বাড়ির কোনো সংযোগ নেই—তাকে কেন্দ্র করে আমার নাম জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “এই গুজবের জেরে নগর ভবন ঘিরে শ্লোগান উঠেছে—চালচোর, গমচোর! আর সেই স্লোগান দেওয়া হচ্ছে আমার বৃদ্ধ বাবাকে লক্ষ্য করে।”

উপদেষ্টার মতে, যারা নিজেদের ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ বলেই দাবি করেন, তারাই এখন গুজবের আশ্রয়ে পরিবারে আঘাত হানছেন।

রাজনীতির নামে প্রতিহিংসা

আসিফ মাহমুদের কণ্ঠে ফুটে ওঠে হতাশা, “জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা চেয়েছিলাম গঠনমূলক রাজনৈতিক চর্চা। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, তরুণ নেতৃত্বের সম্ভাবনা রুদ্ধ করে প্রতিহিংসার বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে।”

তার মতে, রাজনীতিতে ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, প্রয়োজন সত্যের জয়গান।

সামাজিক মাধ্যম: তথ্যের উৎস না বিভ্রান্তির আখড়া?

এই ঘটনা ফের মনে করিয়ে দিল—একটি যাচাই না করা ভিডিও কতটা তীব্র অভিঘাত তৈরি করতে পারে।

গণমাধ্যম বা রাজনৈতিক কর্মীরা যখন না জেনে, না বুঝে একটি পোস্ট শেয়ার করেন, তখন ব্যক্তির মান-সম্মান, এমনকি পারিবারিক শান্তি পর্যন্ত ভেঙে পড়ে।

উপসংহার: সত্যকে ছাপিয়ে না যাক মিথ্যার ধোঁয়া

আসিফ মাহমুদের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, এই চাল-কাণ্ড পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং তার পরিবারকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা মাত্র।

কেউ চাল লুকিয়ে রাখুক কিংবা গুজব ছড়াক—যাচাই ছাড়া শেয়ার করা মানে শুধু তথ্য নয়, দায়িত্ববোধও বিলীন হয়ে যাওয়া।

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে গুজবের গতিও বিদ্যুতের মতো। তাই প্রশ্ন একটাই—আমরা কি তথ্য যাচাইয়ের সমাজে বাস করতে চাই, নাকি অপপ্রচারের উৎসবে মেতে উঠতে?

সত্যের পক্ষে থাকা কখনো পুরনো হয় না।

আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পোস্ট যেন সেটাই আরেকবার মনে করিয়ে দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *