জুনেই চিরতরে বাতিল হয়ে যাচ্ছে যেসব জমির দলিল!

চলতি ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যেই ছয় ধরনের জমির দলিল চূড়ান্তভাবে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ভূমি মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, জালিয়াতি ও আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে—এমন ছয় শ্রেণির দলিলকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হবে এবং সেগুলো স্ক্যান বা ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হবে না।

ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব দলিল বাতিলের মাধ্যমে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা সম্ভব হবে। আগামী জুলাই থেকে দেশজুড়ে ‘বিডিএস ডিজিটাল ভূমি জরিপ’ কার্যক্রমের গতি বাড়ানো হবে বলেও মন্ত্রণালয় সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।

বাতিল হতে যাওয়া ছয় ধরনের দলিল:
১. হেবা দলিল:
যেসব হেবা দলিলে অসুস্থ ব্যক্তি বা প্রতারণার মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়েছে, সেগুলো অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। নির্ধারিত আইন ও প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় এসব দলিল বাতিল করা হবে।

২. ওসিয়তনামা:
আইন অনুযায়ী, সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি অংশ কাউকে ওসিয়ত করা যাবে না। সীমা লঙ্ঘনকারী ও ওয়ারিসদের কাউকে বঞ্চিত করে করা ওসিয়ত অবৈধ হবে। তবে পূর্বের ওসিয়ত বাতিল করে নতুন করে বৈধভাবে ওসিয়ত করা হলে তা গৃহীত হবে।

৩. রেজিস্ট্রেশনবিহীন দলিল:
শুধু মুহুরির মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ও রেজিস্ট্রেশন না হওয়া দলিল বাতিল বলে বিবেচিত হবে এবং এসব দলিল স্ক্যান বা ডিজিটাল করা হবে না।

৪. জাল দলিল:
যেসব দলিল জালিয়াতি ও ভুয়া তথ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে, প্রশাসনের নজরে আসলেই তা বাতিল করা হবে। অনলাইন রেকর্ডে যুক্ত হওয়ার আগেই এসব দলিল বাতিলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

৫. ক্ষমতার অপব্যবহারে অর্জিত দলিল:
রাজনৈতিক বা প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক জমি দখল ও দলিল তৈরি করা হলে সেগুলো বাতিলের আওতায় পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা চাইলে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের মালিকানা পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।

৬. অতিরিক্ত অংশ বিক্রির দলিল:
কোনো ওয়ারিস যদি তার প্রাপ্ত অংশের চেয়ে বেশি জমি বিক্রি করেন, তবে অতিরিক্ত অংশের দলিল অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। প্রকৃত ওয়ারিস আদালতের মাধ্যমে তাদের অংশ ফেরত নিতে পারবেন।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জমির মালিকানা নিয়ে স্বচ্ছতা আনা এবং প্রতারণার মাধ্যমে দলিল প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একইসঙ্গে ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনার দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

যাদের কাছে এই ছয় ধরনের দলিল রয়েছে, তাদের জন্য সরকার থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে—সমস্যাগ্রস্ত দলিল থাকলে নিকটস্থ ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা গ্রহণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জটিলতার সমাধান করতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *