
রাজধানীর সচিবালয়ে চলমান অচলাবস্থা ও কর্মবিরতির প্রেক্ষাপটে সরকারি প্রশাসনে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। মূলত ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে নেমেছেন। তবে আন্দোলনের সমাধান খুব শিগগিরই হতে পারে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। তিনি জানান, জাপান সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফিরলেই সংকট নিরসনে সিদ্ধান্ত আসবে।
বুধবার (২৮ মে) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর ভূমি সচিব এই মন্তব্য করেন। এই বৈঠকে অংশ নেয় ৭ জন সচিবের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি, যারা সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ জারির কারণে উদ্ভূত সংকট নিয়ে আলোচনায় বসেন। আন্দোলনকারীদের মূল অভিযোগ, নতুন অধ্যাদেশে তাঁদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, যা তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। ফলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সচিবালয়েই কার্যত অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ভূমি সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন, “আন্দোলনরত সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের দাবিগুলো আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এই দাবিগুলো মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদের মাধ্যমে সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হবে।” তিনি আরও জানান, বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সফরে জাপানে অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর দেশে ফেরার পর বিষয়টি নিয়ে সরকারিভাবে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হবে এবং সেই আলোচনার ভিত্তিতে সংকট নিরসনের দিকনির্দেশনা আসবে।
অন্যদিকে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে ভূমি সচিবের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমাদের আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নির্ধারণ হবে আলোচনার অগ্রগতি দেখে।” অর্থাৎ এখনও আন্দোলন পুরোপুরি প্রত্যাহার হয়নি, তবে উভয় পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
চলমান আন্দোলনের কারণে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটছে। দাপ্তরিক ফাইল চলাচল, নথি অনুমোদন এবং নিয়মিত বৈঠকগুলোর কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এতে সাধারণ জনগণ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজেও প্রভাব পড়েছে। সরকারের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা নিশ্চিত করতে এ ধরনের অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া অবশ্যই কাম্য নয়—এ নিয়ে সচেতন সকল পক্ষ।
বর্তমানে পুরো প্রশাসন অপেক্ষা করছে প্রধান উপদেষ্টার ফেরার দিকে। জাপান সফর শেষে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন যেমন তাদের অধিকারের প্রতি সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ, তেমনি একটি কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা সরকারের দায়িত্ব।