
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দুটি অধ্যাদেশ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যেখানে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বে ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভা-ার প্রস্তুত ও সংরক্ষণ’ সংক্রান্ত বিধান সন্নিবেশ করা হয়েছে।
এছাড়া সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় স্বপ্রণোদিত হয়ে যেসব সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠবে প্রধান উপদেষ্টা এ নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এসেছে। তারমধ্যে নির্বাচন কমিশনের দুটি অধ্যাদেশ এবং এনবিআরের একটি আইন সংস্কারের প্রস্তাব অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া সংস্কারের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তা সংক্রান্ত আইন (বিশেষ প্রধান আইন, ১৯৯১ সালের ১৩ নম্বর আইন) এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন (২০০৯ সনের ৫ নম্বর আইন) সংস্কারের প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। আইনগুলোর ফলে, নির্বাচনের আগে কমিশনের কাজে গতি পাবে।
প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যে সংস্কারগুলো করেছে, সেগুলোর তালিকা করার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি সংস্কার কমিশনগুলো যে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি সংস্কারের কাজ মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টারা করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাষ্ট্র সফরে চার রাজনৈতিক নেতা সফরসঙ্গী হওয়ার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, এবারের জাতিসংঘ অধিবেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা আমাদের অংশীদার। প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে তারা সঙ্গী হচ্ছেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, স্বপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশোধনী আগামী মাসের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সংশোধনী নিয়ে একটি বই প্রকাশ করবে সরকার। যেখানে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংশোধনী তুলে ধরা হবে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনের দুটি আইন সংশোধনের প্রস্তাব ক্যাবিনেটে পাস হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জন্য নির্বাচন কমিশন বিশেষ বিধান আইন ১৯৯১ এর ৮ ধারার তিনটি সংশোধনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে ক্যাবিনেট মিটিংয়ে। এ ছাড়া আয়কর আইন ২০২৩-এর সংশোধনী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য ট্রেজারি বন্ডের কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।
প্রেস সচিব জানান, সংস্কার কমিশনগুলো যে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি সংস্কারের কাজ বিভিন্ন উপদেষ্টার নির্দেশনায় প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয় সম্পন্ন করেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার কার্যক্রমের একটি বুকলেট আগামী মাসের মধ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
শফিকুল আলম বলেন, ৭৭টি অতি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মধ্যে ২৪টি এরইমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে ১৪টি। বাকি ৩৯টি খুবই দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের অতি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়নের সর্বশেষ অগ্রগতি পর্যালোচনায় এ তথ্য জানানো হয়।
শফিকুল আলম জানান, প্রথম দফায় সর্বমোট ১২১টি সংস্কার বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়। এরমধ্যে পর্যায়ক্রমে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭৭টি সংস্কার চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন চলছে। শফিকুল আলম জানান, প্রস্তাব অনুমোদনের ফলে নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের কাজে গতি পাবে এবং খুব দ্রুত তারা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিতে পারবেন। এ আইন সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনায় যারা অবহেলা করবেন তাদের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। অবহেলাকারী কর্মকর্তাদের শাস্তির বিধানও এতে নিশ্চিত করা হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে আটটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫- অবিলম্বে কার্যকর হবে। অধ্যাদেশটিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ এর ২টি ধারা সংশোধন করা হয়েছে। একটি হলো নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সংক্রান্ত ধারা-৩ এর উপধারা (৪) প্রতিস্থাপন করে একটি ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। আরেকটি হলো নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্ব সংক্রান্ত ধারা-৪ এর উপধারা (২) এর দফা (ক) এর- ক্রমিক নং (২) দ্বারা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বে ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভা-ার প্রস্তুত ও সংরক্ষণ’ সংক্রান্ত বিধান সন্নিবেশ করা হয়েছে। এ ছাড়া দফা (ক) এর ক্রমিক নং (৬), (৭), (৮), (৯) ও (১১) পরিমার্জনক্রমে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনআইডি ইসির অধীনে আসলেও বাতিল করতে হবে ২০২৩ সালে করা এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার আইনটি। এর আগে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
পরবর্তীতে সেই আইন বাতিল করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনেই রাখার জন্য বলেছিল নির্বাচন কমিশন।