
মানবদেহের সবচেয়ে পরিশ্রমী অঙ্গগুলোর মধ্যে কিডনি অন্যতম। দিনরাত বিরামহীনভাবে শরীরের বিষাক্ত উপাদান ছেঁকে বের করে দেয় এই অঙ্গজোড়া। অথচ শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও কিডনি যতটা যত্ন পাওয়ার কথা, বাস্তবে তা অনেক সময় হয় না। আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসাশাস্ত্রে দীর্ঘদিন ধরে কিছু ভেষজকে কিডনি পরিষ্কার ও সুস্থ রাখার অনন্য উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নিয়মিত ও সঠিকভাবে গ্রহণ করলে এগুলো কেবল কিডনিকে ডিটক্সিফাই করে না, বরং সামগ্রিক সুস্থতাও নিশ্চিত করে।
নীচে আলোচনা করা হলো এমন পাঁচটি প্রাকৃতিক ভেষজ সম্পর্কে, যেগুলো কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
আদা
আদা আমাদের রান্নাঘরের পরিচিত একটি মসলা হলেও এর স্বাস্থ্যগুণ অসাধারণ। বিশেষ করে প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা কিডনি সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ কিডনির টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত করে, আর আদা সেই ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়ক। নিয়মিত আদা চা বা খাবারে ব্যবহার করলে হজমশক্তি ও রক্তসঞ্চালন উন্নত হয়, যা শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। আদায় থাকা “জিঙ্গেরোন” নামক যৌগ ভ্যানকোমাইসিন ও ডক্সোরুবিসিন জাতীয় ওষুধের কারণে সৃষ্ট কিডনি ক্ষতির বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দেয়।
মার্শম্যালো রুট
বৈজ্ঞানিক নাম Althaea officinalis। প্রস্রাবনালী ও কিডনির জন্য এটি বহুল পরিচিত একটি ভেষজ। মার্শম্যালো রুট শ্লেষ্মা ঝিল্লির ফোলা কমাতে সাহায্য করে, যা মলাশয় ও মূত্রনালীকে আচ্ছাদিত করে রাখে। এই ফোলা কমে গেলে প্রস্রাবনালীতে জমে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ ও টক্সিনের প্রভাব হ্রাস পায়। এছাড়া এর মূত্রবর্ধক (diuretic) গুণ শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়। যদিও এখনো এ ভেষজের কার্যকারিতা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
গিলয়
আয়ুর্বেদে গিলয় বা Tinospora cordifolia একটি সুপরিচিত ভেষজ। এতে রয়েছে অ্যালকালয়েড, গ্লাইকোসাইড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্ত বিশুদ্ধকরণ, প্রদাহ কমানো এবং ডিটক্সিফিকেশনে কার্যকর। গিলয় প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে, শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড ও লবণ অপসারণে সাহায্য করে। এর ফলে কিডনিতে পাথর বা গাউটজনিত জটিলতা প্রতিরোধ করা যায়। গাছের প্রতিটি অংশ ডাঁটা, পাতা ও শিকড় ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ধনেপাতা
আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় স্বাদ বাড়াতে ধনেপাতার জুড়ি নেই। কিন্তু সুগন্ধি এই পাতায় লুকিয়ে আছে কিডনিকে পরিষ্কার রাখার অনন্য ক্ষমতা। ধনেপাতা প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে, যা কিডনি থেকে বিষাক্ত উপাদান ও বর্জ্য অপসারণ সহজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধনেপাতা কিডনিতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং ভারী ধাতুর ঘনত্ব হ্রাস করে। এর ফলে কিডনি আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
নেটল পাতার নির্যাস
Journal of Nephrology-এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায়, নেটল পাতার নির্যাস ছয় মাস ধরে নিয়মিত সেবনে রোগীদের রক্তে সিরাম ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়, যা কিডনির উন্নত কার্যকারিতার ইঙ্গিত দেয়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রদাহনাশক ও মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য কিডনি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। নেটল পাতার চা দীর্ঘমেয়াদে কিডনি রক্ষার জন্য উপকারী হতে পারে।
কিডনিকে পরিষ্কার ও সক্রিয় রাখতে প্রাকৃতিক ভেষজগুলো দারুণ ভূমিকা রাখে। তবে এগুলোকে মূল চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে না দেখে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সহায়ক উপাদান হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। নিয়মিত পানি পান, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার পাশাপাশি এসব ভেষজকে জীবনে অন্তর্ভুক্ত করা কিডনি সুস্থ রাখার সহজ ও নিরাপদ উপায় হতে পারে।
সূত্র:https://tinyurl.com/3692u4aj