
আফগানিস্তানের আকাশে ফের পুরনো ছায়া। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত, অন্যদিকে তালেবানের কঠোর বার্তা। আফগানিস্তানের কিছু অঞ্চল ফের দখলের ইচ্ছা প্রকাশেই যেন নতুন উত্তেজনার জন্ম দিল। সম্প্রতি ট্রাম্পের আফগান প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত এবার তালেবান থেকে এল হুমকি। তারা বলছে দেশের এক ইঞ্চি মাটি নিয়েও কোনো চুক্তি হবে না।
আফগানিস্তানের ইতিহাসে বাগ্রাম বিমান ঘাঁটি যেন এক অনিবার্য প্রতীক। ২০০১ সালের পর থেকে এটি ছিল মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের প্রাণকেন্দ্র। যেখান থেকে ন্যাটো বাহিনী বছরের পর বছর সামরিক অভিযান চালিয়েছে। ঘাঁটিটি কেবল সামরিক স্থাপনা নয়, বরং আফগান রাজনীতির পালাবদলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি অধ্যায়।
২০২১ সালে বাগ্রাম ঘাঁটি থেকে মার্কিন সেনাদের বিতাড়িত করার পর কোনঠাসা হয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানের প্রতিরোধের সামনে মার্কিন সেনাদের পতনের পর ন্যাটো সদস্যরাও ওই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়।
মার্কিন সেনাদের সাহায্য করা তৎকালীন আফগান সেনাবাহিনীও চাপের মুখে পড়ে। ক্ষমতা পালাবদলের চক্রে ফের সরকারে আসে তালেবান। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পুরনো সেই গল্পে যোগ হয়েছে নতুন পর্ব।
যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর থেকে উঠে আসা বাগ্রামে পুনরায় প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত এবং ট্রাম্পের প্রকাশ্য সতর্কবার্তা পুরো বিষয়টিকে ফের আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এর জবাবে তালেবান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনো রাজনৈতিক চুক্তির বিনিময়ে দেশের মাটি বিক্রি করা যাবে না।
গত কয়েকদিনে বাগ্রাম ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে বিভিন্ন কূটনৈতিক কৌশল ছড়াতে থাকে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গন থেকে এই ঘাঁটি ফেরত নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাগ্রাম ঘাঁটি ফিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে সামাজিক প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সতর্ক করে লিখেছেন, “যদি আফগানিস্তান ঘাঁটি ফিরিয়ে না দেয়, খারাপ কিছু ঘটবে।” সেই বার্তা দ্রুত কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন তৈরি করে।
তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিফ অফ স্টাফ ফাসিহউদ্দিন ফিতরাত ট্রাম্পকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, আফগানিস্তানের এক ইঞ্চি মাটি নিয়েও কোনো চুক্তি সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কিছু লোক ঘাঁটিটি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক চুক্তির কথা বললেও তারা দেশের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করবে না। কারণ এটি আমেরিকার একটি ফাঁদ। ফিতরাত আরও কঠোরভাবে জানান, বাগ্রাম কেবল একটি সামরিক ঘাঁটি নয়, এটি আফগান জাতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতীক।
২০২১ সালে ঘাঁটি ত্যাগের পর যে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা দ্রুত তালেবানের পুনরায় অধিকারের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল এবং আজ ঘাঁটির প্রশ্নে আমেরিকা ও তালেবানের মনোভাব ফের উত্তপ্ত। এই বিবাদ কবে থামবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাগ্রাম ঘাঁটির প্রশ্ন কেবল ভূ-রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সরাসরি জড়িত আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক প্রভাবের সঙ্গে।
তাই এখন প্রশ্ন একটাই: ট্রাম্পের দাবি কি শুধু কূটনৈতিক বার্তা, নাকি তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর বাস্তব প্রভাব ফেলবে?