কাতার ইসরাইলের গোপন এই চুক্তি মীরজাফরও এই গল্প শুনে তব্দা যাবেন

এমন গাদ্দারিও করা যায়! কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের শীর্ষ নেতাদের উপর হামলার ঘটনার পরই এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে। গোপন তথ্য ফাঁসের পর চমকে গেছেন অনেকে।

এদিকে গাজা উপত্যকায় এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে রক্ত, কান্না, শিশুদের লাশ, ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি আর হাজারো মানুষের চোখের জল এই নির্মম বাস্তবতা যখন সামনে আসছে, তখনই আরেকটি ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের চিত্র ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে।

ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ওয়াল্লা এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, ইসরাইলের শীর্ষ প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো কাতারের সঙ্গে কোটি কোটি ডলারের গোপন অস্ত্রচুক্তি করেছে। শুধু তাই নয়, এই চুক্তিগুলো অনুমোদন দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। এবং সবকিছু ঘটেছিল ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হামলার আগেই।

প্রশ্ন উঠছে, যে কাতারকে ইসরাইল প্রকাশ্যে হামাসকে আশ্রয়, অর্থ ও রাজনৈতিক সুরক্ষা দেওয়ার অভিযোগ তোলে, তাদের সঙ্গেই কেন এমন চুক্তি? এর উত্তর সহজ দুই পক্ষ ভিন্ন পথে গেলেও লক্ষ্য এক: ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনকে দুর্বল করা এবং যুদ্ধের আগুন জিইয়ে রেখে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা।

ওয়াল্লার তথ্যমতে—

এলবিট সিস্টেমস কাতারের সঙ্গে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের প্রকল্পে যুক্ত হয়।

রাফায়েলও সই করে কোটি কোটি ডলারের চুক্তি।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইসরাইল এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তারা ২০ বারেরও বেশি দোহা সফর করেন।

ফলে ইসরাইলি প্রযুক্তি, অস্ত্র ও সাইবার ক্ষমতা সরাসরি কাতারের হাতে চলে যাচ্ছে।

এ যেন এক দ্বিমুখী খেলা একদিকে কাতারকে দেখা হয় হামাসের রক্ষক হিসেবে, গাজায় অর্থ পাঠানোর উদার বন্ধু হিসেবে। অন্যদিকে আড়ালে তারা ইসরাইল থেকে কিনছে উন্নত অস্ত্রশস্ত্র। এতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে ব্যবহার করে কাতার আরব বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করছে, আবার ইসরাইলের সঙ্গে আতাত করে শক্তি ও প্রভাব বাড়াচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কেবল নিরীহ ফিলিস্তিনি জনগণ।

অবশ্য ইসরাইল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একে “পুরোপুরি ভুয়া খবর” আখ্যা দিয়েছে। তবে ফিলিস্তিনিদের কাছে এটি নতুন কিছু নয় কারণ বহু বছর ধরেই দেখা গেছে, মুখে যাই বলুক না কেন, ইসরাইলের গোপন কূটনীতি ও সামরিক কৌশল সবসময়ই তাদের দমনের দিকে ঘোরে।

অন্যদিকে কাতারও এসব নথি ভুয়া বলে দাবি করেছে। তাদের বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করার জন্যই এমন ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

কিন্তু স্পষ্টতই খেলা একপাক্ষিক নয়। ইসরাইল ও কাতার উভয়ই জানে, গাজার আগুন নিভে গেলে তাদের কৌশল ভেস্তে যাবে। তাই একদিকে হামাসকে শ্বাসরুদ্ধ করে রাখা, অন্যদিকে অস্ত্র বাণিজ্য ও আঞ্চলিক প্রভাব বাড়ানোই তাদের মূল লক্ষ্য।

এ প্রেক্ষাপটে আলোচনায় এসেছে “কাতার গেট কেলেঙ্কারি”। ইসরাইলি নেতাদের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা কাতারের হয়ে কাজ করেছেন, সাংবাদিকদের প্রভাবিত করেছেন এবং গোপনে অর্থ নিয়েছেন কাতারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য।

দোহায় হামাস নেতাদের উপর সাম্প্রতিক হামলার পর আবারও সামনে এসেছে দোহা–তেল আবিবের এই গোপন আতাত। অনেকেই বলছেন, ইসরাইলের সঙ্গে মিলে কাতার এবার নতুন রাজনৈতিক খেলায় নেমেছে যার উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করা, যাতে শেষ পর্যন্ত ইসরাইলই সর্বাধিক লাভবান হয়। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় কাতার হয়তো ইসরাইলকে গোপন তথ্যেও প্রবেশাধিকার দিয়ে রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *