ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুখবর!

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA) ২০২৫ সালের জন্য হালনাগাদ রক্তচাপের নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এতে ওজন কমানোকে প্রধান কৌশল হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের ওজন মাত্র ৫ শতাংশ কমালে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তচাপ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায় এবং হৃদ্‌রোগ থেকে সুরক্ষা মেলে।

নতুন নির্দেশনার সারসংক্ষেপ
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রক্তচাপের মাত্রা ১৩০/৮০ মিমি এইচজি-এর নিচে রাখা জরুরি। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জীবনধারার পরিবর্তনের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে-লবণ কম খাওয়া, অ্যালকোহল সীমিত করা, শারীরিক পরিশ্রম বাড়ানো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ওজন কমানো। এসব অভ্যাস হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, কিডনি ক্ষতি ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কেন আরও জরুরি
ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। এ কারণে তাদের হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করলে রক্তনালী ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুরক্ষিত থাকে এবং ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা কমে যায়।

ওজন কমানো: মূল কৌশল
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শরীরের ওজন কমপক্ষে ৫% কমালে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বড় পরিবর্তন আসে। ৫% ওজন কমালে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ প্রায় ৫ মিমি এইচজি হ্রাস পায়। এতে হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের ওপর চাপ কমে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ওজন কমানোর বাড়তি উপকারিতা
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ: ওজন কমালে শরীর ইনসুলিন ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে, ফলে রক্তে শর্করা কমে। হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি হ্রাস: মাঝারি মাত্রার ওজন কমানো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ করে। কোলেস্টেরল উন্নতি: ওজন কমালে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ে এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমে, যা হৃদ্‌স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

গবেষণার প্রমাণ
‘লুক এহেড ট্রায়াল’-এর গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীরা যদি শরীরের ওজন ৫-১০% কমাতে পারেন, তবে তাদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ (HbA1c), রক্তচাপ এবং রক্তে চর্বি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়। এছাড়া হৃদ্‌যন্ত্র ও কিডনি সুরক্ষিত থাকে এবং সামগ্রিক সুস্থতা বাড়ে।

৫% ওজন কমানোর সহজ উপায়
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফল, চর্বিহীন প্রোটিন ও পূর্ণ শস্য রাখতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও ট্রান্সফ্যাট এড়াতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটা, সাঁতার বা সাইকেল চালানোর মতো শারীরিক কার্যক্রম করতে হবে। নিয়মিত ওজন ও রক্তচাপ মাপতে হবে।

ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব ওজন কমানো শুরু করলে এর উপকারিতা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। এমনকি পরবর্তীতে সামান্য ওজন বেড়ে গেলেও প্রাথমিক ওজন হ্রাসের সুফল দীর্ঘস্থায়ী হয়।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, “রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হৃদ্‌স্বাস্থ্যের জন্য ৫% ওজন কমানোই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গেম চেঞ্জার।”

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *