
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসুতি। এমন আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণে কেউ যদি এগিয়ে যেতে চায়, তাহলে অবশ্য-ই তা বাস্তবে রূপ নিতে বাধ্য। এমন বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশী বংশোভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক শরীফুল এ খান।
যিনি তার পড়াশোনা শেষ করে বেছে নিয়েছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন। ইচ্ছে অনুযায়ী সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে শরীফুল হয়েছিলেন কর্ণেল। তবে এই বাংলাদেশী এখন বয়ে আনলেন আরো এক বিরল সাফল্য।
সম্প্রতি শরীফুল পদোন্নতি পেয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদ মর্যাদায় উন্নীত হয়েছেন। তার এমন সাফল্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে বইছে আনন্দের জোয়ার। সেই সাথে বাংলাদেশের গর্ব শরীফুল এখন রীতিমতো টক অব দ্য যুক্তরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, ওয়াশিংটন ডিসি’র পেন্টাগনে অনুষ্ঠিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে শরীফুলকে ওই পদে পদোন্নতি দেয়ার ঘোষণা ও অভিষিক্ত করা হয়।
সূত্র মতে, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এম. ওসমান সিদ্দিক গত ১৯ আগস্ট পেন্টাগন আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স এ’ দেয়া এক পোস্টে জানান, “বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ও বিশ্ব কাঁপানো অদম্য মেধাবী সেনা কর্মকর্তা শরীফুল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পাওয়ায় বিশ্ব রেকর্ডে অনন্য এক ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। মার্কিন সেনাবাহিনীতে কোনো বাংলাদেশি-আমেরিকান এই প্রথম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হলেন।
এদিকে আরো জানা গেছে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে শরীফুল খানকে শপথ বাক্য পাঠ করান যুক্তরাষ্ট্র স্পেস ফোর্সের ভাইস চিফ অব স্পেস অপারেশন্স জেনারেল শন ব্রাটন।
জানা গেছে, শরীফুল পেন্টাগনে ‘গোল্ডেন ডোম ফর আমেরিকা’র ডিরেক্টর অব স্টাফ হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন করছেন। সংশ্লিষ্ট পদে শরীফুল কৌশলগত নীতি-পরিকল্পনা ও ক্রস-ফাংশনাল কার্যক্রম সমন্বয় করার পাশাপাশি শিল্প, একাডেমিয়া, ন্যাশনাল ল্যাব এবং সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সাথে সাথে আগামীতে আরো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো কল্পে দৃঢ়ভাবে কাজ করছেন।
সূত্র মতে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফুল বিগত ৯৭’সালে ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্স একাডেমি থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তী তিনি ওয়েবস্টার ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স কলেজ, স্কুল অব অ্যাডভান্সড এয়ার অ্যান্ড স্পেস স্টাডিজ, নেভাল ওয়ার কলেজ, এমআইটি ও জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় সহ মার্কিন সামরিক ও বেসামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাধিক উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।
এছাড়াও শরীফুল তার কর্মময় জীবনে মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ, স্যাটেলাইট অপারেশন, স্পেস সিস্টেম, লঞ্চ ও ন্যাশনাল রিকনাইসেন্স অফিসে স্যাটেলাইট অপারেটর হিসেবে কাজ করেছেন। বিগত ২০০১ সালে তিনি কুয়েতের আলি আল সালেম বিমান ঘাঁটিতে মোতায়েন হন। ২০০৭ সালে ‘অপারেশন সাইলেন্ট সেনট্রি’র সময় ডিপ্লয়মেন্ট কমান্ডার হিসেবেও অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে শরীফুল দায়িত্ব পালন করেন।
কমান্ডিং ক্ষেত্রে শরীফুল স্কোয়াড্রন ও উইং উভয় পর্যায়ের কমান্ড করেছেন। কলোরাডোর শ্রিভার স্পেস ফোর্স বেসে ৩১০তম স্পেস উইং’র কমান্ডার হিসেবে প্রায় দেড় হাজার সামরিক সদস্য ও ১৯টি ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এই শরীফুল। শুধু তাই নয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতি বিভাগেও দায়িত্ব পালন করেছেন শরীফুল।
সূত্র মতে, শরীফুলের সুদীর্ঘ সামরিক কর্মময় জীবনে প্রাপ্ত সম্মানজনক পদ মর্যাদা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ৫ম স্পেস অপারেশনস স্কোয়াড্রনে অপারেশনস অফিসার, ২১তম স্পেস অপারেশনস স্কোয়াড্রনে এক্সিকিউটিভ অফিসার, ৩৭৯তম স্পেস রেঞ্জ স্কোয়াড্রনের কমান্ডার, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে এয়ার ফোর্স স্ট্র্যাটেজি ডিভিশনের ডেপুটি, ৩১০তম স্পেস উইং’র কমান্ডার ও স্পেস ট্রেনিং অ্যান্ড রেডিনেস কমান্ডে মোবিলাইজেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট।
তিনি অসংখ্য সামরিক বিভাগ থেকে অসংখ্য বিরল সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তন্মধ্যে অন্যতম হল, লেজিয়ন অব মেরিট, ডিফেন্স মেরিটোরিয়াস সার্ভিস মেডেল, মেরিটোরিয়াস সার্ভিস মেডেল, জয়েন্ট সার্ভিস কমেন্ডেশন মেডেল, আর্মড ফোর্সেস এক্সপেডিশনারি মেডেল ও এয়ার অ্যান্ড স্পেস অ্যাচিভমেন্ট মেডেল।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ওসমান সিদ্দিক তার অনুভূতি থেকে শরীফুলকে নিয়ে জানান, শরীফুল খান এমন সম্মানে ভূষিত হওয়ায় সে শুধু যুক্তরাষ্ট্র সশস্ত্র বাহিনীর এখন গর্ব নয়, একজন বাংলাদেশী হিসেবে বাংলাদেশ তথা গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীদের সম্মান বিশ্ব দরবারে এক অনন্য শিখরে তুলে ধরলেন। শরীফুলের এমন অর্জন যা কল্পনাতীত নয়, এখন বাস্তব।