
জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও কর্মীদের স্বীকৃতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত এক নাগরিক সভায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বক্তব্য রাখার সময় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন
সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি তালিকা প্রণয়ন, আন্দোলনের ডকুমেন্টেশন এবং কারাবিধির সংস্কারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দেন।
বক্তব্যের শুরুতে আন্দোলনকারীদের অসীম আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, সেটার স্বীকৃতি দেওয়াই এই সভার উদ্দেশ্য।
কিন্তু আপনারা যদি এমন আচরণ করেন, তাহলে সেই আত্মত্যাগের সঙ্গে এটা মানানসই হয় না। তিনি অভিযোগ করেন, শহীদ ও আহতদের তালিকা তৈরির বিষয়ে বারবার দাবি ওঠার পরও ভেতর থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ ও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে,
যা সমন্বয়কে ব্যাহত করছে।উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমরা প্লেনের বাথরুমের চেয়ে ছোট আয়তনের কক্ষে আট বছর বন্দি থাকা একজন আন্দোলনকারীর দুর্দশা শুনেছি। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন শেখ হাসিনা এত বড় দানবে কীভাবে পরিণত হলেন, কীভাবে এত হত্যাযজ্ঞ চালালেন?”
সভায় তিনি ব্যাখ্যা করেন, এই অবমানবিক দমননীতি সম্ভব হয়েছে কারণ শেখ হাসিনাকে অনেকেই ব্যক্তি হিসেবে না দেখে ‘সাত খুন মাফ’ রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে দেখেছেন। এই উপলব্ধির মাধ্যমে উপস্থিত সকলে ঐক্য ও সম্প্রীতির আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলনের সময় কেউ কারও ধর্ম, দল, আর্থিক অবস্থা বা পরিচয় নিয়ে চিন্তা করেনি। সবাই শুধু জানতেন, আমরা মানুষ। সেই মানবিক ঐক্য যেন হারিয়ে না যায়।”
অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দেন—
আন্দোলনের শহীদ ও কর্মীদের তালিকা তৈরি করে ‘জুলাই জাদুঘরে’ সংরক্ষণ করা হবে।
ওরাল হিস্ট্রি, বই ও ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় সরকারের সহায়তা থাকবে।
কারাবিধির সংস্কারের কাজ অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া বিভাজনের রাজনীতি পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তালিকাবাজির রাজনীতি করব না। জুলাই যোদ্ধাদের সম্মানিত করার কাজই আমাদের মুখ্য দায়িত্ব।”
সভায় উপস্থিত অনেক অংশগ্রহণকারী হাত তুলে কারাবন্দিদের কল্যাণে প্রস্তাবিত সংস্কারের পক্ষে সম্মতি জানান। বক্তব্য শেষে আইন উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে বলেন, “আমাদের হাতে সময় সীমিত, কিন্তু আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তালিকা, জাদুঘর এবং ডকুমেন্টেশন তা বাস্তবায়ন করব।”
এই সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে হট্টগোলের মধ্যে পড়লেও শেষ পর্যন্ত সংহতি ও সম্মান প্রতিষ্ঠার বার্তা দিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।