
ভারতের কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) ঘিরে আতঙ্কে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ বহু বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা। সে ভয় যে কতটা গভীর হতে পারে, তা ফের প্রমাণ করল কলকাতায় ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনা। ‘বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে’ এই আতঙ্কে আত্মহত্যা করেছেন এক ব্যক্তি।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কলকাতার রিজেন্ট পার্ক এলাকার আনন্দপল্লী ওয়েস্টে ৬৩ বছর বয়সী দিলীপ কুমার সাহার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (৩ আগস্ট) সকালে নিজের বাড়িতেই আত্মহত্যা করেন তিনি।
পুলিশ সূত্র বলছে, দিলীপ সাহা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে কলকাতায় আসেন। জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি কাটিয়েছেন এখানেই, কাজ করেছেন দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি স্কুলে। তার ভোটার কার্ড ও অন্যান্য বৈধ পরিচয়পত্র ছিল বলেও জানিয়েছে পরিবার।
তার স্ত্রী আরতি সাহা জানান, এনআরসি চালু হলে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে- এই ভয়ই তাকে ভেঙে দিয়েছিল মানসিকভাবে। কিছুদিন ধরেই এই আতঙ্কে তিনি গভীর উদ্বেগে ছিলেন। আরতি বলেন, ‘ওর মধ্যে অন্য কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না। শুধু বলতেন, যদি ওকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়! বাংলাদেশে তো এখন আর কারও সঙ্গে যোগাযোগও নেই। ও তো বহু আগেই এ দেশে চলে এসেছে। ভোটার কার্ডসহ সমস্ত নথিও ছিল।’
রোববার সকালে দীর্ঘ সময় ধরে সাড়া না পেয়ে পাশের বাড়ির আত্মীয়দের নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ফেলেন আরতি সাহা। তখনই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে দিলীপ সাহার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান তারা। পুলিশ জানায়, ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যার পেছনে এনআরসি-ভিত্তিক দেশছাড়ার ভয়ই মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনার খবর পেয়ে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী ও স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস ঘটনাস্থলে যান এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান। তিনি বলেন, ‘এনআরসির নামে কেন্দ্র সরকার যা করছে, তা সম্পূর্ণ অমানবিক। একজন মানুষ নিজের দেশেই নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন আতঙ্কে ভুগে প্রাণ হারালেন। এ থেকে স্পষ্ট, বিজেপির নীতিতে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’
কলকাতার মতো শহরে জন্মসূত্রে প্রাপ্ত অধিকার নিয়েই যখন মানুষ আতঙ্কে আত্মঘাতী হন, তখন এনআরসিকে ঘিরে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান ও মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। দিলীপ সাহার মৃত্যু সে প্রশ্নগুলোকে আরও জোরালো করে তুলছে।