ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখোমুখি আমেরিকা!

শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই মানুষ নানাভাবে প্রকৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসছে। অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ ও বন উজাড় করে পরিবেশের যে ক্ষতি করা হয়েছে, তাতে বিশ্ব আজ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি।

এর ফলে প্রকৃতিও যেন মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। খরা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।

সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়—নরস্টারস—ভবিষ্যতে আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে। এই ঝড় যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে ভয়াবহ বৃষ্টি, তুষারপাত এবং বন্যার মাধ্যমে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি করছে।

সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে এই নরস্টার ঝড়গুলো তৈরি হয়। এগুলো মূলত উত্তরের ঠান্ডা আর্টিক বাতাস এবং আটলান্টিক মহাসাগরের উষ্ণ আর্দ্র বাতাসের সংমিশ্রণে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর জন্য এই ঝড়গুলো একটি বড় হুমকি।

গত কয়েক দশকে নরস্টার ঝড়গুলো এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে, কিছু ঝড়কে দুর্যোগ চলচ্চিত্রের নামের মতো ডাকনামও দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে আঘাত হানা ঝড়টি ছিল ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী। ঘন্টায় ১০০ মাইলের বেশি গতিতে আঘাত হানা এই ঝড়ের ফলে কিছু এলাকায় ৬০ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষারপাত হয় এবং প্রাণ হারান ২০০ জনেরও বেশি।

২০১০ সালের স্নোম্যাগেডন নামের আরেকটি ঝড় পেনসিলভেনিয়া, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া এবং পশ্চিম ভার্জিনিয়ার কিছু অঞ্চলে ২০ ইঞ্চিরও বেশি তুষারপাত ঘটায়। প্রাণহানি ঘটে ৪১ জনের এবং লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

২০১০ সালের সেই ঝড়ের সময় ফিলাডেলফিয়ার একটি হোটেলে তিনদিন আটকে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার জলবায়ুবিজ্ঞানী মাইকেল মান। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তার মধ্যে কৌতূহল জন্মায়—এই ধরনের ঝড় কীভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে?

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে নরস্টার ঝড়ের সংখ্যা কমে আসবে, কারণ আর্টিক অঞ্চল সবচেয়ে দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে। তবে ঝড়ের তীব্রতা কেমন হবে, তা নিয়ে এতদিন কোনো নির্ভরযোগ্য গবেষণা ছিল না। গবেষক মাইকেল মান মনে করেন, এই বিষয়টি জলবায়ু গবেষণায় যথাযথ গুরুত্ব পায়নি।

সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা নরস্টার ঝড়গুলোর ইতিহাস বিশ্লেষণ করে একটি ডিজিটাল অ্যাটলাস তৈরি করেছেন। এতে ৯০০টিরও বেশি ঝড় বিশ্লেষণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সাইন্সেসে সোমবার প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৪০ সাল থেকে নরস্টার ঝড়গুলোর সর্বোচ্চ বাতাসের গতি ৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তুষারপাত ও বৃষ্টির হার বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।

এই গবেষণার ভিত্তিতে উডওয়েল ক্লাইমেট রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র বিজ্ঞানী জেনিফার ফ্রান্সিস উত্তর-পূর্ব আমেরিকার বাসিন্দাদের প্রতি সতর্কতা জারি করেছেন। তিনি বলেন, “নরস্টার হচ্ছে উত্তর-পূর্বে বারবার আঘাত হানা এক ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক শক্তি। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, কারণ ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার চেয়ে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ অনেক কম ব্যয়সাপেক্ষ।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত শুধু গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর প্রভাব সরাসরি মানুষের জীবন ও অবকাঠামোর উপর পড়ছে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর মধ্যেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *