যে তিনটি কারণেই কন্যারা হতে পারেন সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত!

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোঃ বেলায়েত হোসেন এক ভিডিও আলোচনায় বলেছেন, তিনটি বিশেষ আইনি পরিস্থিতিতে কন্যারা তাঁদের পিতার সম্পত্তি থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হতে পারেন।

যদিও ইসলামী শরিয়ত এবং প্রচলিত উত্তরাধিকার আইনে কন্যাদের জন্য সম্পত্তিতে নির্দিষ্ট হিস্যা (অংশ) নির্ধারিত আছে, কিছু জটিল বাস্তবতা ও আইনি ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সেই অধিকার কার্যকর হয় না।

প্রথম কারণ: পিতা-মাতার মৃত্যুর আগেই সন্তান মারা গেলে, সন্তানের উত্তরসূরি থাকলেও তারাও বঞ্চিত হতে পারে অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন জানান, ১৯৬১ সালের ১৫ জুলাইয়ের পূর্বে পিতা বা মাতার জীবদ্দশায় যদি কোনও পুত্র বা কন্যা সন্তান মারা

যান, তবে সে সন্তান বা তার উত্তরসূরিরা পৈতৃক সম্পত্তি থেকে কিছুই পায় না। এটি ছিল পুরাতন উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী। তবে ১৫ জুলাই ১৯৬১ সালের পরের কোনো মৃত্যুর ক্ষেত্রে যদি সন্তান মারা যান এবং তার উত্তরসূরি থেকে যান (যেমন: ছেলে-মেয়ে), তাহলে তারা উত্তরাধিকার হিসেবে সেই সন্তানের স্থলাভিষিক্ত হয়ে পিতামহ বা মাতামহের সম্পত্তির অংশ পেতে পারেন। কিন্তু যদি মৃত্যু ১৯৬১ সালের ১৫ জুলাইয়ের আগের হয়, তবে নতুন ভূমি আইন বা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বণ্টন ব্যবস্থাও তাতে কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না।

দ্বিতীয় কারণ: সন্তান নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে এবং তার কোনও প্রতিনিধিও না থাকলে

যদি কোনো সন্তান (পুত্র বা কন্যা) মারা যান এবং মৃত্যুর সময় তিনি কোনো সন্তান, স্বামী বা স্ত্রী রেখে না যান, অর্থাৎ সম্পূর্ণ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান, তাহলে তার কোনও প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে সেই সন্তানের নামে পৈতৃক সম্পত্তিতে কোনো অধিকার থাকবে না। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কেবলমাত্র গর্ভজাত বা ঔরসজাত সন্তানই প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুর ফলে উত্তরাধিকারী না থাকলে সম্পত্তির অধিকার হারিয়ে যায়।

তৃতীয় কারণ: সন্তান জীবিত থাকাকালীন গুরুতর অন্যায় বা অবহেলার কারণে পিতা-মাতা অন্য ওয়ারিশদের নামে রেজিস্ট্রি করে যান

অনেক সময় দেখা যায়, জীবিত সন্তান যদি পিতা-মাতার সঙ্গে এমন আচরণ করেন যা মানসিকভাবে অত্যন্ত কষ্টদায়ক বা অসম্মানজনক হয়, তাহলে পিতা-মাতা তাদের জীবনকালেই সেই সন্তানকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে অন্য ওয়ারিশের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে যদি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে সেই সন্তান এবং তার উত্তরসূরিরা কোনোভাবেই পরে আদালতের মাধ্যমে সেই সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারবেন না। এমনকি আদালতে মামলা করলেও, যদি প্রমাণিত হয় পিতা-মাতা ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পত্তি হস্তান্তর করেছেন, তাহলে বঞ্চিত সন্তান আইনি প্রতিকার পাবেন না।

ভিডিওতে অ্যাডভোকেট বেলায়েত স্পষ্ট করেন, তিনি কোরআনের উত্তরাধিকার বিধান অস্বীকার করছেন না। বরং বাস্তবতার নিরিখে কিছু আইনি ব্যাখ্যা তুলে ধরছেন যেগুলো প্রায়ই ওয়ারিশদের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি তৈরি করে। তিনি বলেন, কন্যা সন্তান শুধুই মেয়ে হিসেবেই নয়–মা, স্ত্রী ও বোন হিসেবেও বিভিন্ন অবস্থায় সম্পত্তি লাভ করেন। তবে কিছু নির্দিষ্ট আইনি শর্ত ও ঘটনা তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে।

সব কন্যা সন্তান পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন—এমনটি নয়। কিন্তু তিনটি বিশেষ অবস্থায়–(১) সন্তান পিতার জীবিত অবস্থায় মারা গেলে এবং ঘটনাটি ১৫ জুলাই ১৯৬১ সালের পূর্বের হলে, (২) সন্তান নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে এবং (৩) সন্তান পিতা-মাতাকে গুরুতর মানসিক আঘাত দিয়ে থাকলে–সেসব ক্ষেত্রে কন্যারা বা তাদের উত্তরসূরিরা আইনত সম্পত্তির দাবি করতে পারেন না। এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে সম্পত্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=97ya6AM-PC0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *