অবশেষে তেহরানে ইসরায়েলের হামলা, এবার কি করবে ইরান!

তেহরানে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। রাজধানী তেহরানে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসব বিস্ফোরণের খবর নিশ্চিত করেছে।

সিএনএন ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের বরাতে জানা গেছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই হামলাকে “প্রতিরোধমূলক হামলা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি

বড় হুমকি হয়ে উঠলে তারা সামরিক পদক্ষেপ নেবে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান এখনো উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী পর্যায়ের কাছাকাছি।

এই হামলার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইরানের সঙ্গে নতুন একটি পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইতোমধ্যে ইরানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে পাঁচ দফা বৈঠক করেছেন। তবে এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরাসরি ভূমিকা রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানান, “এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।” তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল আমাদের জানিয়েছে, আত্মরক্ষার স্বার্থে তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের বাহিনীকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রাখছেন।”

এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা চরমে উঠেছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কর্মীদের ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছিল। আলজাজিরা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলের সম্ভাব্য আরেকটি হামলার আশঙ্কা থেকে। সিবিএস-এর খবরে বলা হয়, ইরাকে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকেও কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া বাহরাইন, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যীয় দেশ থেকেও মার্কিন কূটনীতিকদের পরিবারকে স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেক্স এই সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছেন। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানিয়েছে, তারা এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

১১ জুন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য এখন ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আমাদের কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, “ইরান কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না — এই বার্তা স্পষ্ট।”

এদিকে, ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল আজিজ নাসির জাদে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “যদি আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে শত্রু ইরানের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য হয়ে অঞ্চল ছেড়ে যেতে হবে, কারণ মধ্যপ্রাচ্যের সব মার্কিন ঘাঁটি এখন আমাদের নজরদারির আওতায় রয়েছে।”

জাতিসংঘে ইরানের মিশন জানিয়েছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র চায় না। তাদের দাবি, সামরিক আগ্রাসন পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করবে। কূটনৈতিক সমাধানই এই সংকট নিরসনের একমাত্র উপায়।

এদিকে, ওমানে এই সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আলোচনায় অংশ নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। কূটনৈতিক এই তৎপরতার মাঝেও পরিস্থিতি ভয়াবহ সংঘাতের দিকে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ইসরায়েলের সামরিক অবস্থান। -টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *