ইমরান খানের জামিন ইস্যুতে অবস্থান স্পষ্ট করলেন বিলাওয়াল

পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি বলেছেন, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান জামিনে মুক্তি পেলে তার বা তার দলের কোনো আপত্তি থাকবে না।

সোমবার (৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে সামা টিভি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোমবার তিনি বলেন, যদি আদালত পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন, তাহলে আমরা তার বিরোধিতা করব না। জামিন তার আইনি অধিকার, এবং আমি বা আমার দল সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করব না।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানে প্রতিটি মামলাই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং এই মামলাটিও সেই ধারারই অংশ।

পানির ইস্যুতে ভারতের হুমকিকে যুদ্ধের ঘোষণার শামিল

সাক্ষাৎকারে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ও সাম্প্রতিক উত্তেজনার দিকেও ইঙ্গিত করেন বিলাওয়াল। বিশেষ করে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের পানির প্রবাহ বন্ধ করার হুমকিকে তিনি জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন ও সম্ভাব্য ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

বিলাওয়াল বলেন, বর্তমানে পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি বহু বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত সীমান্তে যুদ্ধবিরতি বজায় রয়েছে, প্রকৃত শান্তি এখনো অধরা।

তিনি বলেন, ভারত এখন পানি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যা ২৪ কোটির বেশি পাকিস্তানির জীবনের জন্য হুমকি। এটি অমানবিক এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থি।

দ্বিপাক্ষিক সংলাপের আহ্বান

পাকিস্তানের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বিলাওয়াল বলেন, ইসলামাবাদ সবসময় সংলাপ ও কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাস করে। তিনি সন্ত্রাসবাদ, কাশ্মীর এবং পানির অধিকারসহ সব মূল ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানান।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি অনুযায়ী পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেটিকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে গণ্য করা হবে।

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নদীজল বণ্টনের ভিত্তি স্থাপন করে। বিলাওয়াল পরিষ্কারভাবে জানান, ভারত একতরফাভাবে এই চুক্তি বাতিল বা স্থগিত করার অধিকার রাখে না।

ভারতের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রচারের অভিযোগ

বিলাওয়াল অভিযোগ করেন, ভারত বিশেষ করে পানি ও কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দীর্ঘদিন ধরে বিভ্রান্ত করছে এবং এখন মৌলিক সম্পদকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। পানি পাকিস্তানের জন্য অপরিহার্য, এবং এই বিষয়ে কোনো আপস করা হবে না।

তিনি আরও বলেন, চুক্তির আওতায় ভারত পুরোপুরি পানি বন্ধ করার সক্ষমতা রাখে না, কিন্তু তারা পানি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।

বিলাওয়াল জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান একটি দায়িত্বশীল পারমাণবিক রাষ্ট্র এবং সবসময় দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষপাতী। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ভারতের অব্যাহত আগ্রাসন এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে আরও বিপন্ন করে তুলছে।

পিপিপি চেয়ারম্যান বলেন, পাকিস্তান শান্তি চায়, তবে পানি বা ভূখণ্ড সংক্রান্ত কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপের জবাব শক্তভাবে দেওয়া হবে।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও বিশ্বশক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা ভারতের আগ্রাসী অবস্থানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তিনি বলেন, কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ এখনই প্রয়োজন, কারণ দক্ষিণ এশিয়ার একশো কোটির বেশি মানুষের ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *