এবার ভিসা বাতিলের ঘোষণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের

চীন ও হংকংয়ের শিক্ষার্থীদের ভিসা পেতে এখন থেকে পড়তে হবে কঠিন নজরদারির মুখে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এসব অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদন আরও কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন প্রশাসন চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা ‘আক্রমণাত্মকভাবে’ বাতিল করবে।

বিশেষ করে যারা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে জড়িত কিংবা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ক্ষেত্রে পড়াশোনা করছেন, তাদের টার্গেট করা হবে।” এই ঘোষণা একটি বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়, যার শিরোনাম ছিল “New Visa Policies Put America First, Not China” — অর্থাৎ “নতুন ভিসা নীতিতে আমেরিকাই আগে, চীন নয়।

চীন বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস দেশ। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৭০,০০০-এর বেশি, যা মোট বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।

ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চশিক্ষা বিরোধী অবস্থান

চীনা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন ট্রাম্প প্রশাসন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করছে। এরই মধ্যে হোয়াইট হাউজ বিদেশি শিক্ষার্থীদের নতুন ভিসা প্রদান সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে এবং সমস্ত দূতাবাস ও কনস্যুলেটকে এই সংক্রান্ত নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী বা বিনিময় প্রোগ্রামের নতুন ভিসা না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

একই সঙ্গে, সব বিদেশি শিক্ষার্থী ভিসার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত যাচাইয়ের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর।

হার্ভার্ডসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ

সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন বাতিল করে দেয়, যা একটি আদালত সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন। এই সিদ্ধান্ত এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রো-প্যালেস্টাইন’ বিক্ষোভ ও বহুত্ববাদ ভিত্তিক কার্যক্রমকে ঘিরে হোয়াইট হাউজের সঙ্গে টানাপোড়েনের প্রেক্ষিতে।

এছাড়া, রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জন মুলেনার ও টিম ওয়ালবার্গ ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়কে উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাপ দিচ্ছেন, প্রযুক্তি স্থানান্তরের শঙ্কায়। তারা একে আমেরিকার উদ্ভাবনের “চীনের সামরিক-শিল্প জোটে সরাসরি প্রবাহ” হিসেবে অভিহিত করেন।

রাজনৈতিক মতপ্রকাশে শিক্ষার্থীদের টার্গেট

রুবিও ও পররাষ্ট্র দপ্তর আরও জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক মতপ্রকাশ, সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট, এমনকি ছোটখাটো আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে শত শত শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যাদের টার্গেট করা হচ্ছে, তাদের অনেকে প্যালেস্টাইন সমর্থনকারী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বা সামাজিক মাধ্যমে গাজা যুদ্ধবিরোধী মতামত দিয়েছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এসব কার্যকলাপের আড়ালে ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ ছড়ানো হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থী, আইনজীবী ও অধিকারকর্মীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *