ভিতর থেকে ক্যানসার ধ্বংস করছে নতুন এই ওষুধ! সতর্ক হন এখনই

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের MUSC Hollings Cancer Center-এর গবেষকরা মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসারের বিরুদ্ধে সম্ভাবনাময় একটি নতুন অস্ত্র আবিষ্কার করেছেন। এই নতুন ওষুধটি, যা এখনও প্রিক্লিনিকাল পর্যায়ে রয়েছে, ক্যানসার কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া (শক্তির উৎপাদন কেন্দ্র) ক্ষতি করে ভিতর থেকে আক্রমণ করে।

গবেষণাটি Cancer Research জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং এর নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. বেসিম ওগ্রেটমেন, Hollings-এর Basic Science-এর অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর ও Lipidomics Shared Resource-এর পরিচালক।

গবেষক দল Head and Neck Squamous Cell Carcinoma নামে এক আক্রমণাত্মক ক্যানসার ধরণের টিউমার বৃদ্ধি রোধে কাজ করেছেন। এই ক্যানসারটি নাক, মুখ ও গলায় তৈরি হয় এবং প্রচলিত চিকিৎসার পরও অনেক রোগীর ক্যানসার ফিরে আসে।

প্রচলিত চিকিৎসা কার্যকর হলেও, এতে ক্যানসারবহির্ভূত কোষও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

LCL768: ক্যানসার কোষের ভিতর থেকে আক্রমণ

গবেষকরা LCL768 নামের একটি যৌগ তৈরি ও পরীক্ষা করেছেন। এটি সিরামাইড নামের চর্বি-আধারিত যৌগের কৃত্রিম রূপ। সিরামাইড কোষের স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং চাপের সময় কোষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। মাথা ও ঘাড়ের অনেক ক্যানসারে সিরামাইডের পরিমাণ কম থাকে, যা রোগের অগ্রগতি এবং টিউমারের আক্রমণাত্মক বৃদ্ধির কারণ।

LCL768 C18-সিরামাইড বৃদ্ধি করে ক্যানসার কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ায়। C18-এর বৃদ্ধি কোষকে মাইটোফ্যাজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মাইটোকন্ড্রিয়া সরাতে বাধ্য করে। মাইটোকন্ড্রিয়া ধ্বংস হলে ক্যানসার কোষ শক্তি হারায় এবং মারা যায়।

এছাড়া, LCL768 কোষের ফুমারেট নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ অণুকে ব্লক করে, যা ক্যানসার কোষের শক্তি উৎপাদন আরও কমিয়ে দেয়। C18-সিরামাইড বৃদ্ধি ও ফুমারেট হ্রাস মিলিতভাবে ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করে।

পরীক্ষার ফলাফল

গবেষকরা LCL768 মাউস মডেল ও রোগীর টিস্যু থেকে তৈরি ল্যাব টিউমারে পরীক্ষা করেছেন। ওষুধটি মাইটোকন্ড্রিয়ায় C18-সিরামাইড উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। চিকিৎসার পর ক্যানসার কোষে মাইটোফ্যাজি এবং শক্তির পতন স্পষ্ট দেখা গেছে, ফলে টিউমারের বৃদ্ধি ধীর হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ হলো, LCL768 স্বাভাবিক কোষকে খুব কম প্রভাবিত করে, যা কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের তুলনায় নিরাপদ বিকল্প হতে পারে।

ড. ওগ্রেটমেন বলেন, “এই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের তুলনায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে পারে। কারণ স্বাভাবিক কোষ এই প্রক্রিয়ার উপর খুব বেশি নির্ভর করে না, তাই তারা মূলত অক্ষত থাকে।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

যদিও LCL768 এখনও প্রিক্লিনিকাল পর্যায়ে রয়েছে, প্রাথমিক ফলাফল আশাব্যঞ্জক। গবেষকরা এটিকে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে নেওয়ার জন্য কাজ করছেন। এই নতুন ওষুধ মাইটোকন্ড্রিয়ার দুর্বলতা ব্যবহার করে ক্যানসার কোষের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ধ্বংস করার একটি নতুন পথ খুলতে পারে।

ড. ওগ্রেটমেন বলেন, “আমরা শুধু ক্যানসার কোষকে লক্ষ্য করছি না, আমরা তাদের শক্তি এবং চাপ ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাকে কাজে লাগাচ্ছি। এটি বিভিন্ন ধরনের টিউমারের জন্য কার্যকর হতে পারে।”

সূত্রঃ https://medicalxpress.com/news/2025-09-drug-cancer-cell-mitochondria-halt.html

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *