
মানবদেহের সুস্থতা বজায় রাখতে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। পানি ছাড়া জীবন কল্পনাই করা যায় না। শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তার কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পানির ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে আমাদের হৃদপিণ্ড বা হার্ট সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি
পান করা অত্যন্ত জরুরি। হার্ট প্রতিদিন লাখোবার স্পন্দিত হয়ে শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত সরবরাহ করে। এই জটিল প্রক্রিয়ায় পানির ভূমিকা অপরিসীম। তাই পানি কম খেলে যেমন দেহ ডিহাইড্রেশনে ভোগে, তেমনি হার্টের কাজও বাধাগ্রস্ত হয়।
গবেষণা বলছে, শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক থাকলে রক্ত সহজে সঞ্চালিত হয়। রক্তে যদি পানি কম থাকে, তবে রক্ত ঘন হয়ে যায়। তখন হৃদপিণ্ডকে বেশি জোরে পাম্প করতে হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে হার্টের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করলে রক্ত তরল থাকে এবং হার্ট সহজে কাজ করতে পারে। এভাবে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে আসে।
প্রশ্ন আসতে পারে, হার্ট সুস্থ রাখতে প্রতিদিন কতটা পানি পান করা উচিত। সাধারণভাবে বলা হয় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত আড়াই থেকে তিন লিটার পানি প্রয়োজন। তবে এই চাহিদা সবার জন্য সমান নয়।
কারো কাজ যদি শারীরিক পরিশ্রমের হয়, তবে তার বেশি পানি প্রয়োজন হতে পারে। গরমের দিনে ঘাম বেশি হয় বলে শরীর তখন অতিরিক্ত পানি হারায়, তাই সে সময় আরও বেশি পানি পান করতে হয়। আবার শীতকালে তৃষ্ণা কম পেলেও শরীরের ভেতরে পানির চাহিদা থেকে যায়। তাই মৌসুম কিংবা পরিবেশ যাই হোক না কেন, পানি পান কমানো উচিত নয়।
হার্ট সুস্থ রাখতে পানির সঙ্গে শরীরের অন্যান্য কার্যক্রমও যুক্ত। পানি শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়। এগুলো জমে থাকলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং হৃদপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে, ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। আর স্বাভাবিক রক্তচাপ মানেই হার্টের জন্য বাড়তি সুরক্ষা।
অনেকেই ভাবেন শুধু তৃষ্ণা পেলেই পানি পান করা যথেষ্ট। কিন্তু এটি সঠিক ধারণা নয়। তৃষ্ণা লাগা মানে শরীরে ইতোমধ্যেই পানির ঘাটতি শুরু হয়েছে। তাই তৃষ্ণা পাওয়ার অপেক্ষা না করে দিনের বিভিন্ন সময়ে অল্প অল্প করে পানি পান করা ভালো। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস পানি পান করা হার্টের জন্য উপকারী। রাতে দীর্ঘসময় পানি না খাওয়ার কারণে শরীর কিছুটা শুষ্ক হয়ে যায়। তাই সকালে পানি শরীরকে সতেজ করে এবং রক্ত সঞ্চালন সহজ করে।
কফি, চা বা সফট ড্রিংক অনেকেই পানির বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু এগুলো আসলে পানির জায়গা পূরণ করতে পারে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরকে আরও ডিহাইড্রেট করে দেয়। তাই খাঁটি পানি পান করাই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর উপায়। ফলের রস, সবজি বা স্যুপ থেকেও শরীর কিছুটা পানি পায়, তবে তা কখনোই মূল চাহিদা মেটাতে পারে না।
পানি কম খাওয়ার ফলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডিহাইড্রেশনের কারণে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা বাড়ে। এর পাশাপাশি হৃদপিণ্ডে অস্বস্তি বা অনিয়মিত স্পন্দনও দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে পানি স্বল্পতা উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সচেতনভাবে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
এখানে আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার। হঠাৎ করে একসাথে অনেক বেশি পানি পান করাও শরীরের জন্য ভালো নয়। এতে কিডনির ওপর চাপ পড়ে এবং শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি তৈরি হতে পারে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি ধীরে ধীরে পান করা সবচেয়ে উপকারী।
পানি শুধু তৃষ্ণা মেটানোর জিনিস নয়, বরং এটি আমাদের হার্টকে সুরক্ষিত রাখার অন্যতম বড় উপাদান। সঠিক পরিমাণে পানি পান করলে হার্ট অনেকটা চাপমুক্ত থাকে, রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। হার্ট সুস্থ রাখতে ও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পানির বিকল্প নেই।