
স্বাস্থ্যকর সবকিছু বাইরের খাবারে নয়, আমাদের রান্নাঘরের সাধারণ উপাদানেই লুকিয়ে আছে অগণিত শক্তিশালী ও পুষ্টিকর উপকারিতা। ঢেঁড়শ ও মেথি দিয়ে তৈরি এক সহজ পানীয় তারই প্রমাণ। আঁশ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভেষজ উপাদানে ভরপুর এই প্রাচীন পানীয়টি হজমশক্তি, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণসহ নানাভাবে শরীরকে সহায়তা করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সকালে খালি পেটে নিয়মিত ঢেঁড়শ-মেথির পানি খাওয়ার রয়েছে অসংখ্য সুফল।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা:
প্রচলিত চিকিৎসায় ঢেঁড়শ ও মেথি-উভয়ই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এগুলোর কার্যকর উপাদান পানিতে মিশে যায়। সকালে খালি পেটে এই পানি খেলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে এবং হঠাৎ রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এটি বিশেষ করে প্রিডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সে ভুগছেন এমনদের জন্য উপকারী হতে পারে।
গবেষণা কী বলছে:
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ১০ গ্রাম মেথি গুঁড়া গ্রহণ করেছিলেন, তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। টানা তিন বছর মেথি সেবনে অংশগ্রহণকারীদের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বেড়েছে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমেছে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে যারা মেথি খাননি, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ছিল চার গুণেরও বেশি।
হজমে আরামদায়ক:
ঢেঁড়শের মিউসিলেজ নামের প্রাকৃতিক জেল জাতীয় উপাদান হজমতন্ত্রকে শান্ত রাখে। মেথির আঁশ এই প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা, গ্যাস কমানো এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। সকালে খালি পেটে এই পানি খেলে হজমপ্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে জেগে ওঠে এবং সতেজ অনুভূতি দেয়।
ওজন কমাতে সহায়ক:
ঢেঁড়শ-মেথির পানি খেলে সহজে ক্ষুধা লাগে না। এটি ক্ষুধা দমন করে এবং খাওয়ার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মেথি আবার কার্বোহাইড্রেটের হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে। যদিও এটি কোনো যাদুকরী সমাধান নয়, তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে নিয়মিত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রদাহ কমাতে পারে:
ঢেঁড়শ ও মেথি-উভয়েই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক উপাদান সমৃদ্ধ। নিয়মিত এই পানি পান করলে শরীরের ভেতরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা জয়েন্ট পেইন, দুর্বলতা বা অন্যান্য মেটাবলিক সমস্যার সঙ্গে যুক্ত। এটি শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে নিরাময়ের কোমল উপায়।
ত্বক ও চুলের যত্নে পুষ্টি:
ঢেঁড়শের ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সঙ্গে মেথির অ্যামিনো অ্যাসিড ও লৌহ উপাদান ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। এটি ত্বক মসৃণ করতে, চুল পড়া কমাতে এবং ধীরে ধীরে ত্বক-চুলে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক অস্ত্র:
২০২৪ সালে ACS Omega জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢেঁড়শ ও মেথির নির্যাস সাগর ও মিঠা পানির প্রায় ৯০ শতাংশ মাইক্রোপ্লাস্টিক দূর করতে সক্ষম। উদ্ভিদভিত্তিক এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণাগুলোকে একত্রিত করে পানি থেকে আলাদা করে ফেলে-যা প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে পরিবেশবান্ধব ও নিরীহ।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।