
কিডনি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল ছেঁকে ফেলে। যখন কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন শরীরে বর্জ্য জমতে শুরু করে এবং নানা জটিলতা দেখা দেয়। এই অবস্থাকে কিডনি রোগ বা রেনাল ডিজিজ বলা হয়।
এটি হঠাৎ তীব্র আকারে দেখা দিতে পারে আবার দীর্ঘ সময় ধরে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়ে স্থায়ী কিডনি বিকলতায় রূপ নিতে পারে, যা সাধারণত অপরিবর্তনীয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ শনাক্ত করা কঠিন হলেও মুখ ও গলায় কিছু উপসর্গ ধরা পড়ে,
যা সতর্কতার সংকেত হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, এসব উপসর্গ শুধুমাত্র কিডনি রোগেই দেখা যায় না, অন্য কারণেও হতে পারে। তবুও লক্ষণগুলো অবহেলা না করাই শ্রেয়।
ফোলা বা ফুলে যাওয়া মুখ
কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর একটি হলো মুখমণ্ডল ফোলা। কিডনি অতিরিক্ত তরল ঠিকভাবে বের করতে না পারলে শরীরে পানি জমে যায়। এর ফলে চোখ ও গালের চারপাশে বিশেষভাবে ফোলা দেখা দেয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এই ফোলা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। ত্বক টানটান লাগে এবং স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। অনেক সময় হাত, পা ও গোড়ালিতেও ফোলাভাব ছড়িয়ে পড়ে। অস্বাভাবিকভাবে ফুলে থাকা মুখ উপেক্ষা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ফ্যাকাশে বা হলদেটে ত্বক
কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরে জমা হওয়া টক্সিন ত্বকের রঙ ও গঠনে পরিবর্তন আনে। মুখ ও গলা ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে, ধূসর বা হলদেটে হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। শরীরে বর্জ্য জমা ও পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে ত্বক শুষ্ক, খসখসে বা রুক্ষ হয়ে উঠতে পারে। সাধারণত ধীরে ধীরে এই পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়।
চুলকানি ও লাল দাগ
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের অগ্রসর পর্যায়ে রোগীরা তীব্র চুলকানিতে ভোগেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটিকে প্রুরাইটাস বলা হয়। মুখ ও গলায় এই চুলকানি বেশি দেখা যায়, যা চুলকাতে চুলকাতে লাল দাগ, ফুসকুড়ি বা ক্ষত তৈরি করতে পারে। অনেক সময় এসব ক্ষত সংক্রমিতও হতে পারে। কিডনি সঠিকভাবে বর্জ্য ও খনিজ অপসারণ না করতে পারলে সেগুলো ত্বকে স্নায়ুকে উত্তেজিত করে, ফলে চুলকানি বাড়ে। মুখ ও গলায় দীর্ঘস্থায়ী চুলকানির সঙ্গে লাল দাগ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
চোখের নিচে কালো দাগ
চোখের নিচে কালো দাগকে অনেক সময় শুধু ক্লান্তির ফল হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু এটি কিডনি সমস্যারও সংকেত হতে পারে। কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে শরীরে তরল জমা হয় এবং বর্জ্য পদার্থ চোখের চারপাশের পাতলা ত্বকে প্রভাব ফেলে। ফলে সেখানে কালচে দাগ ও ফোলা দেখা দেয়। দেখতে অনেকটা আঘাতের দাগের মতো হলেও এর সঙ্গে ফোলাভাবও থাকতে পারে। হঠাৎ চোখের নিচে কালো দাগ দেখা দিলে, বিশেষ করে ফোলাভাব ও অতিরিক্ত ক্লান্তির সঙ্গে থাকলে কিডনি পরীক্ষা করানো জরুরি।
গলার শিরা ফুলে যাওয়া
অগ্রসর পর্যায়ের কিডনি রোগে শরীরে অতিরিক্ত তরল জমা হয়, যা রক্তনালীর চাপ বাড়িয়ে দেয়। এর প্রভাব গলার শিরায় পড়তে পারে। গলার দু’পাশের শিরা ফুলে ওঠে বা স্পষ্ট হয়ে যায়। শুয়ে পড়লে বা শারীরিক চাপ নিলে এটি আরও দৃশ্যমান হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই অবস্থাকে জুগুলার ভেইন ডিস্টেনশন বলা হয়। গলায় অস্বাভাবিকভাবে শিরা ফুলে উঠলে তা কিডনি ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে, যা দ্রুত চিকিৎসা মূল্যায়ন প্রয়োজন করে।
কিডনি রোগকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসা সহজ হয় এবং জটিলতা কমানো সম্ভব। মুখ ও গলায় দেখা দেওয়া এসব উপসর্গ অবহেলা না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করাই সবচেয়ে নিরাপদ পথ। সচেতনতা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা কিডনি সুস্থ রাখার মূল চাবিকাঠি।