
অম্লতা, গ্যাস বা পেট ফাঁপার সমস্যার নাম আজকাল ঘরে ঘরে শোনা যায়। রাত জাগা খাওয়া, অগোছালো খাদ্যাভ্যাস কিংবা মানসিক চাপেই এগুলো দেখা দিতে পারে। কিন্তু বিপদের বিষয় হলো,
অনেক সময় এই সাধারণ হজমজনিত অস্বস্তির আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে ভয়ংকর রোগ পাকস্থলীর ক্যান্সার। আরও জটিলতা হলো, প্রাথমিক অবস্থায় পাকস্থলীর ক্যান্সার খুব একটা স্পষ্টভাবে ধরা দেয় না। বরং এটি নীরবে সাধারণ হজম সমস্যার মতো উপসর্গ তৈরি করে, যা সহজেই বিভ্রান্ত করতে পারে।
নিচে এমনই ৫টি উপসর্গ তুলে ধরা হলো, যেগুলো অবহেলা না করাই ভালো।
পেট ভরা লাগা, এমনকি অল্প খাবারের পরও
সাধারণত বেশি খাওয়ার পর পেট ভারী লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু পাকস্থলীতে টিউমার তৈরি হলে সামান্য খাবারের পরও দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা ভরভরেভাব অনুভূত হতে পারে। ধীরে ধীরে এটি খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং অজানা কারণে ওজন পরিবর্তন ঘটায়, যা সাধারণ অম্লতার ক্ষেত্রে সচরাচর দেখা যায় না।
অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়া পেটের বাইরে
অম্লতা সাধারণত বুকজ্বালা বা পেটের উপরের অংশে জ্বালাপোড়ার মতো অনুভূতি দেয়। কিন্তু পাকস্থলীর ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ব্যথার ধরণ ভিন্ন হতে পারে। এই অস্বস্তি পিঠে ছড়িয়ে যেতে পারে কিংবা বিরক্তিকর, মৃদু ব্যথা হিসেবে থাকতে পারে, যা অনেকেই গ্যাস্ট্রাইটিস বা শারীরিক ভঙ্গিমাজনিত সমস্যার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন।
বারবার বমি বমি ভাব, স্পষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই
নষ্ট খাবার খাওয়া বা হজমে সমস্যা হলে বমি বমি ভাব হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি বারবার এমন অনুভূতি হয়, এমনকি ভারী বা তেল-চর্বি খাবার ছাড়াও, তবে এটি পাকস্থলীর আস্তরণে জটিলতার ইঙ্গিত হতে পারে। ক্ষুধামান্দ্যের সঙ্গে স্থায়ী বমি বমি ভাব পাকস্থলীর ক্যান্সারের একটি উপেক্ষিত লক্ষণ হতে পারে।
মলত্যাগের রঙ বা ধরণে পরিবর্তন
সাধারণ অম্লতার কারণে মলত্যাগের ধরণ খুব একটা বদলায় না। কিন্তু পাকস্থলীর ক্যান্সারের কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা মলকে গাঢ় বা তারের মতো কালচে করে তোলে। কখনো মল অস্বাভাবিকভাবে আঠালো হতে পারে বা বিরক্তিকর গন্ধ দীর্ঘদিন ধরে থাকতে পারে। এগুলো অম্লতার উপসর্গ নয় এবং বারবার দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অস্বাভাবিক ঢেঁকুর
খাওয়ার পর ঢেঁকুর ওঠা স্বাভাবিক। তবে ঢেঁকুর যদি অস্বাভাবিকভাবে ঘন ঘন ওঠে বা এর সঙ্গে টক, ধাতব স্বাদ কিংবা হালকা বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে এটি গ্যাসের সাধারণ সমস্যা নয়। অনেক সময় টিউমার স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে গ্যাস জমে অস্বাভাবিক ঢেঁকুর তৈরি হয়।
পাকস্থলীর ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গগুলো প্রায়ই অবহেলিত হয়, কারণ এগুলো গ্যাস্ট্রিকের সাধারণ সমস্যার মতোই মনে হয়। তবে এসব পরিবর্তন নিয়মিত দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।