
২০২৫-২৬ করবর্ষ থেকে সব করদাতাকে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট http://etaxnbr.gov.bd ব্যবহার করতে হবে। অনলাইন রিটার্ন (ই-রিটার্ন) ব্যবস্থা তুলনামূলক সহজ, দ্রুত ও ঝামেলাবিহীন।
ধরা যাক, অনন্যা রহমান নবম গ্রেডের একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন, নিয়মিত প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা দেন, ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্র আছে, কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাও রয়েছে। এ বছর তিনি নিজের জন্য একটি মোবাইল ও সন্তানের জন্য ট্যাব কিনেছেন। এখন প্রশ্ন—তিনি কীভাবে ঘরে বসেই অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন?
ই-রিটার্ন দাখিলের জন্য মূলত দরকার—
বায়োমেট্রিক ভেরিফাই করা মোবাইল নম্বর
ই-টিআইএন নম্বর
বেতন সনদপত্র (iBAS++)
প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিবরণ
ব্যাংক স্টেটমেন্ট
সঞ্চয়পত্র বা বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র
গত বছরের রিটার্ন কপি
তবে মনে রাখতে হবে—অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে কোনো দলিল আপলোড করতে হয় না। শুধু তথ্য ইনপুট দিলেই যথেষ্ট।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া
১. প্রথমে http://etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে e-Return অপশনে প্রবেশ করুন।
২. নতুন ব্যবহারকারী হলে Sign Up করতে হবে। টিআইএন নম্বর, নিজের মোবাইল নম্বর ও ক্যাপচা দিয়ে ভেরিফাই করুন।
৩. মোবাইলে আসা OTP দিয়ে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করুন।
৪. রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে আপনার ই-রিটার্ন অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।
অবশ্যই নিজের নামে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে। অন্যের নামের নম্বর ব্যবহার করলে টিআইএন ব্লক হয়ে যেতে পারে।
রেজিস্ট্রেশনের পর টিআইএন নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করুন। ড্যাশবোর্ডে আপনার রিটার্ন সাবমিশন, ট্যাক্স রেকর্ডসহ সব তথ্য দেখা যাবে।
রিটার্ন সাবমিশনের ধাপসমূহ
১. সাবমিশন শুরু
ড্যাশবোর্ড থেকে Regular e-Return সিলেক্ট করুন।
নিজস্ব (Self) অ্যাসেসমেন্ট বেছে নিন।
আয়ের উৎস (যেমন চাকরি, ভাড়া, কৃষি, ব্যবসা, আর্থিক সম্পদ ইত্যাদি) টিক চিহ্ন দিন।
অনন্যা রহমানের ক্ষেত্রে টিক দিতে হবে—Income from Employment ও Income from Financial Assets।
২. আয়ের তথ্য পূরণ
Employment অংশে নিজের অফিস, পদবি ও iBAS++ থেকে পাওয়া বেতন ভাতার বিবরণ দিন।
Financial Assets-এ ব্যাংকের তথ্য, সুদ/প্রফিট, ব্যালান্স ইত্যাদি ইনপুট করুন।
৩. বিনিয়োগ ও রিবেট
জীবন বীমা, জিপিএফ, সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস ইত্যাদির তথ্য দিন।
সঠিকভাবে ইনপুট দিলে সিস্টেম নিজেই রিবেট হিসাব করে দেবে।
৪. ব্যয়ের তথ্য
বাৎসরিক খরচ যেমন—খাদ্য, পোশাক, সন্তানের পড়াশোনা, বিল, যাতায়াত, বিনোদন ইত্যাদি লিখতে হবে।
অনন্যা যেহেতু সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন, তাই বাসাভাড়া অংশ ফাঁকা রাখতে হবে এবং কমেন্টে উল্লেখ করতে হবে।
৫. সম্পদ ও দায়
কৃষি/অ-কৃষি সম্পত্তি, মোটরগাড়ি, সোনা, আসবাব, ইলেকট্রনিক্স, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক ব্যালান্স ইত্যাদির তথ্য দিতে হবে।
দেওয়া ঋণ বা পাওয়া ঋণের তথ্যও উল্লেখ করতে হবে।
৬. ট্যাক্স ও পরিশোধ
সিস্টেম আপনার মোট কর হিসাব দেখাবে।
বিকাশ, রকেট, নগদ, ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা কার্ডের মাধ্যমে সরাসরি কর পরিশোধ করা যাবে।
সব তথ্য ইনপুট শেষ হলে Return View থেকে ভুলত্রুটি যাচাই করুন। সঠিক থাকলে Submit Return-এ ক্লিক করুন। সাবমিট করার পর রিটার্ন কপি ও প্রাপ্তিস্বীকারপত্র ডাউনলোড/প্রিন্ট করে রাখা যাবে।