এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর!

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবসরের ছয় মাসের মধ্যে অবসরকালীন সব ধরনের সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজি জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া ১৩ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, শিক্ষকরা অবসর ভাতা পেতে বছরের পর বছর বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে বাধ্য হন, যা এক ধরনের হয়রানি। একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খুব সীমিত বেতন পান—এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই তাদের অবসর ভাতা অবসরের ছয় মাসের মধ্যে প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হলো। আদালত আরও বলেন, শিক্ষকরা যেন আর অবসর ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়।

২০১৯ সালে দেশের এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক–কর্মচারী অবসরকালীন সুবিধা পেতে একটি রিট দায়ের করেন। রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া জানান, এর আগে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতন থেকে ৬ শতাংশ কেটে নেওয়া হতো এবং সেই টাকাই অবসরে ফেরত দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ সুবিধা থেকে যাওয়া ৬ শতাংশই বহাল রাখা হয়। এর বিরুদ্ধে শিক্ষকেরা রিট দায়ের করেন।

দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ে বলেন,

* শিক্ষকদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ কাটা হলে তার বিপরীতে অতিরিক্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
* অবসরের ছয় মাসের মধ্যে অবশ্যই অবসরকালীন ভাতা ও সুবিধা দিতে হবে।

* *বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯* অনুযায়ী মূল বেতনের ২% এবং ৪% কাটা হতো।
* *অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫*–এও একই নিয়ম ছিল।
* কিন্তু ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল প্রজ্ঞাপনে কাটা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৪% ও ৬% করা হয়।
* অতিরিক্ত কাটা হলেও এর বিপরীতে কোনো আর্থিক সুবিধা বাড়ানো হয়নি।
* ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল নতুন প্রজ্ঞাপনে শিক্ষকদের বেতন থেকে ৬% এবং ৪% কাটার আদেশ দেওয়া হয়।

অতিরিক্ত অর্থ কাটার পরও সুবিধা না পাওয়ায় শিক্ষক–কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন ও কর্মসূচি পালন করেন। পরে প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে তারা হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, বাড়তি কর্তনের বিপরীতে সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে এবং অবসরকালীন ভাতা ও সুবিধা অবশ্যই ছয় মাসের মধ্যে প্রদান করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *