
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক সম্পর্কে তীব্র অন্তর জ্বালায় ভুগছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে নয়াদিল্লিতে। লন্ডন-ভিত্তিক সংবাদপত্র ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের (এফটি) একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।
ইসলামাবাদ, নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদনটিতে ইসলামাবাদ এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের ‘অপ্রত্যাশিত পুনরুত্থান’ ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়। সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল
অসীম মুনিরকে এই গ্রীষ্মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুবার উচ্চ পর্যায়ের পরিবেশে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। সবশেষ তিনি ফ্লোরিডায় মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিলার অবসর অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এফটির প্রতিবেদন মতে, পাকিস্তান এবং ভারত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষের ঠিক এক মাস পরে জুন মাসে অসীম মুনির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দুই ঘন্টার একান্ত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন।
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের একজন অনাবাসী সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান এফটিকে বলেন, “মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্কে যা ঘটছে তা অবাক করার মতো। আমি এখনকার সম্পর্ককে এমন একটি সম্পর্ক হিসেবে বর্ণনা করব যা অপ্রত্যাশিত পুনরুত্থান উপভোগ করছে, এমনকি একটি নবজাগরণও উপভোগ করছে। পাকিস্তান খুব সফলভাবে বুঝতে পেরেছে, কীভাবে এমন একজন অপ্রচলিত প্রেসিডেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে হয়।”
এফটি এই পরিবর্তনের জন্য ঊর্ধ্বতন পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক কিছু কৌশলের অবদান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সহযোগিতা, ট্রাম্পের ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কের ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ এবং জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কিত চুক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পদক্ষেপগুলি হোয়াইট হাউসের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে বলে উল্লেখ করে পত্রিকাটি।
প্রতিবেদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি উল্লেখ করা হয়েছে সেটি হল- মার্চ মাসে ২০২১ সালের কাবুল বিমানবন্দরে বোমা হামলার সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারী আইসিস-কে সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয এবং তাকে মার্কিন হেফাজতে স্থানান্তর করা হয়। ট্রাম্প তার স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে গ্রেপ্তারের জন্য পাকিস্তানের প্রকাশ্যে প্রশংসা করেছিলেন।
সংবাদপত্রটি ট্রাম্প-সমর্থিত ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্যোগ ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল এবং পাকিস্তানের ক্রিপ্টো কাউন্সিলের মধ্যে এপ্রিলের একটি চুক্তিরও বিশদ বিবরণ দিয়েছে। এই উদ্যোগের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তান সফরের সময় দেশটির খনিজ সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন।
আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে এফটি বলেছে, ভারত পাক-মার্কিন সম্পর্ক উষ্ণায়নের প্রতি গভীর বিরক্তির কথা জানিয়েছে। বিশেষ করে একদিকে ভারতের উপর মার্কিন শুল্ক ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি অন্যদিকে পাকিস্তানের হার ১৯ শতাংশ নির্ধারণ করার পর ব্যাপক বিচলিত দেশটি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের এই দাবির বিরোধিতা করেন যে, আমেরিকা দুই দেশের মধ্যে মে মাসে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছে। নয়াদিল্লি জোর দিয়ে বলেছে, দুদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সরাসরি চ্যানেলের মাধ্যমে চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছে।