যুদ্ধবিরতির আশ্বাস থেকে সরে ফের যুদ্ধের আহ্বান ট্রাম্পের

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধে একটি সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত। তাঁর মতে, বন্দিমুক্তি, মানবিক সহায়তা এবং যুদ্ধবিরতির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই আশাবাদী মনোভাব বদলে গেছে।

এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় নিযুক্ত প্রতিনিধিদের সরিয়ে নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, হামাস “সমন্বিত নয়” এবং “সৎভাবে” আলোচনায় অংশ নিচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ এখন বিকল্প উপায়ে বন্দিমুক্তির চেষ্টা করছেন।

ট্রাম্প এখন গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান না জানিয়ে ইসরায়েলকে ‘শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যেতে’ বলছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “তারা (হামাস) মরতে চায়, এবং এটা খুবই ভয়াবহ। এখন সময় এসেছে কাজটা শেষ করার।”

এই মন্তব্যগুলো স্পষ্টভাবে দেখায়, ট্রাম্পের আগের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা থমকে গেছে। যদিও ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী আলোচনায় অগ্রগতি নেই, তবে মিশর ও কাতার যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, এই ধরনের স্থগিতাবস্থা “জটিল আলোচনার” স্বাভাবিক অংশ। ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেছেন, আলোচনা এখনও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েনি।

এদিকে, ট্রাম্প হামাসকেই দোষারোপ করে বলেন, “আমরা এখন শেষ দিকের কিছু বন্দির কথা বলছি। তারা জানে শেষ বন্দির পর কী হবে। তাই তারা আলোচনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না।”

স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস অবশ্য ট্রাম্প ও উইটকফের কৌশলগত অবস্থানকে কার্যকর বলেই মনে করছেন। তিনি বলেন, “তারা অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং আমরা আশাবাদী যে কিছু সফলতা আসবে।”

তবে এ সফলতা কবে আসবে, সে বিষয়ে কেউই নিশ্চিত নয়। ট্রাম্প নিজেই এর আগে এক সপ্তাহের মধ্যে সমঝোতা হবে বলে দাবি করেছিলেন, যা বাস্তবায়িত হয়নি।

অন্যদিকে, গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ ট্রাম্পের আফ্রিকা উপদেষ্টা মাসাদ বুলোসকে ক্ষুধার্ত শিশুদের ছবি দেখিয়ে বলেন, “এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।”

ট্রাম্পের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ৬ কোটি ডলার সহায়তা পাঠিয়েছে, কিন্তু “মানুষ জানে না, এবং আমরা ধন্যবাদও পাইনি।” তিনি বলেন, “আমরা আরও সহায়তা করব, কিন্তু এসব সহায়তা মাঝেমধ্যেই লুট হয়ে যায়।”

তবে মার্কিন প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ তদন্তে হামাসের পক্ষ থেকে মার্কিন সহায়তা লুটের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও এখন ইসরায়েলের প্রতি কঠোর মনোভাব নিচ্ছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যা ইসরায়েলকে ক্ষুব্ধ করেছে।

তবে ট্রাম্প এ বিষয়টি পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, “ওর বক্তব্যের কোনো ওজন নেই। আমি ওকে পছন্দ করি, কিন্তু এ কথা কোনো গুরুত্ব বহন করে না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *