জুলকারনাইনের স্ট্যাটাসে উঠে এল সুব্রত-মোল্লা মাসুদের চাঞ্চল্যকর সত্য

কুষ্টিয়া জেলার কালিশঙ্করপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে সেনাবাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে। একই অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের সহযোগী শুটার আরাফাত ও শরীফ। অভিযানকালে উদ্ধার করা হয়েছে ৫টি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড অ্যামুনিশন এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন।

গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে আরাফাত ও শরীফকেও গ্রেপ্তার করা হয়। লন্ডনে অবস্থানরত আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুক ভেরিফায়েড প্রোফাইলে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি হয়। সুব্রত বাইনের নাম তালিকার শীর্ষে ছিল এবং তার ধরা পড়ার জন্য ১ লাখ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। সে সময় তিনি ভারত সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। তবে নিয়মিত অবৈধভাবে বাংলাদেশে ফিরে এসে বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদা তুলতেন এবং যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিতেন।

কোলকাতায় পুলিশ তাকে আটক করলেও তৎকালীন সন্ত্রাসী তানভীরুল ইসলাম জয়ের সহায়তায় তিনি মুক্তি পান। এরপর সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ ও জয়ের মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং সেনাবাহিনী গোয়েন্দা (MI) সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠে।

ভারতীয় গোয়েন্দাদের প্রশিক্ষণ ও সমর্থন
তাদেরকে মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশে কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দিল্লি থেকে তাদের দেওয়া হয় অস্ত্র, অর্থ ও উলফা, ইউনাইটেড লিবারেশন অফ নাগাল্যান্ডসহ নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাদের ছবি ও ঠিকানা, যা দিয়ে তারা মিশন চালাত।

২০০৩ সালে ঢাকায় এসে তারা নাগাল্যান্ডের একটি গোষ্ঠীর এক নেতার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। এছাড়া পাকিস্তান ভিত্তিক একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে মোস্তাকিম কাবাবকে গুলি করে হত্যা করে সুব্রত। বহুবার উলফার নেতা পরেশ বড়ুয়াকে হত্যার চেষ্টা করেন।

পালিয়ে বেড়ানো এবং ধাপে ধাপে গ্রেপ্তার
২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুরোধে কোলকাতায় সন্ত্রাসীদের আটকের অভিযান শুরু হয়। সুব্রত বাইন ভারতে অবস্থানকালে একাধিক দেশ ঘুরে অবশেষে কলকাতার বালিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার হন। এরপর তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় বাংলাদেশে হস্তান্তর করা হয়।

র‌্যাবের তত্ত্বাবধানে থাকার সময় তার মেয়ে ও পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হয়। তাকে স্নাইপার রাইফেল ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

নতুন মিশন ও স্যাটেলাইট ফোনে যোগাযোগ
২০২৩ সালের শেষদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় তাকে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে নিশানা করার মিশন দেওয়া হয়। এ কাজে সফল হলে তাকে পরিবারের সঙ্গে কানাডায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর মিশন স্থগিত হয় এবং সুব্রত আবার ভারতীয় গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকে স্যাটেলাইট ফোনসহ পাঠানো হয় বাংলাদেশে। দুজনের সঙ্গে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের যোগাযোগ বজায় রাখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *