
তিন দফা দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করেছেন শিক্ষকরা। কর্মবিরতির চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পর এ ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, অতিরিক্ত সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ও অন্যান্য-ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
চলমান আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের নেতারা সভায় তাদের তিন দফা দাবির প্রতিটি দফার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষক নেতাদের জানানো হয়, শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ইতিবাচক পরিবর্তন প্রায় চূড়ান্ত। ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন কার্যক্রম চলমান। দ্রুততম সময়ে এর নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। সহকারী শিক্ষক এন্টি পদে ১১তম গ্রেডের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে এবং খুব শিগগিরই শিক্ষক নেতাদের সমন্বয় করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সরকারের অবস্থান তুলে ধরে শিক্ষকদের চলমান কর্মসূচির বিষয়ে নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিকে নিরুৎসাহিত করেন এবং শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যেতে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, শিক্ষকদের প্রতিটি দাবি যৌক্তিক। দাবি বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষ না হয়ে সহযোগী হয়ে দাবি বাস্তবায়নের জন্য তিনি শিক্ষক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভা শেষে সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ সমকালকে বলেন, চলমান কার্যক্রম সুষ্ঠু বাস্তবায়নের প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের প্রতি সহযোগী মনোভাব রেখে চলমান কর্মসূচি ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, উল্লেখিত সময়ে দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দিয়ে দাবি আদায় নিশ্চিত করা হবে।
শিক্ষকদের তিন দফা হলো, কনসালটেশন কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।
এছাড়া বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী শুক্রবার ও শনিবার বিদ্যালয় বন্ধ রাখা এবং প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেন অনুষ্ঠিত হয় সে দাবিও তারা করেছেন। গত চার দিনের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে বেশিরভাগ বিদ্যালয়েই শিক্ষকরা ক্লাসে যাননি। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে গেলেও খেলাধুলা ছাড়া আর কোনো লেখাপড়া হয়নি।
এর আগে তিন দফা দাবিতে ৫ মে থেকে ১৫ পর্যন্ত ১ ঘণ্টা, ১৬ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত ২ ঘণ্টা, ২১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হওয়ায় ২৬ মে থেকে তারা লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছিলেন।