
পাকস্থলীর ক্যানসারকে অনেক সময় বলা হয় “নীরব ঘাতক”। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে এর উপসর্গগুলো এতটাই হালকা হয় যে বেশিরভাগ মানুষ তা সাধারণ অম্লতা বা বদহজম ভেবে অবহেলা করে।
অথচ এ সময়েই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে ক্যানসার শনাক্ত ও চিকিৎসা অনেক সহজ হয়। তাই পাকস্থলীর ক্যানসারের উপসর্গ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। চিকিৎসকরা বলছেন, নিম্নলিখিত ৫টি লক্ষণ দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত থাকলে তা অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে-
১. অল্প খেয়েই পেট ভরে যাওয়া
খাবার শুরু করার পর খুব তাড়াতাড়ি পেট ভরে যাওয়া বা ক্ষুধা কমে যাওয়া পাকস্থলীর ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এটিকে বলা হয় ইয়ারলি স্যাটাইটি (Early satiety)। পাকস্থলীতে টিউমার বেড়ে ওঠার কারণে স্বাভাবিক প্রসারণ ব্যাহত হয়, ফলে কয়েক কণা খাবার খেলেই অস্বাভাবিক ভরাট অনুভূতি দেখা দেয়। এর ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমে যায় এবং অজান্তেই ওজন হ্রাস পায়।
২. স্থায়ী বদহজম বা হার্টবার্ন
যদি নিয়মিত অম্লতা, বুকজ্বালা বা পেটের ওপরের অংশে অস্পষ্ট অস্বস্তি অনুভূত হয়, তবে তা শুধু এসিডিটি নয়, পাকস্থলীর ক্যানসারের প্রাথমিক সংকেতও হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ খেয়েও যদি এ সমস্যা বারবার হয় এবং সপ্তাহের পর সপ্তাহ অব্যাহত থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩. হালকা বমি বমি ভাব বা পেটের অস্পষ্ট অস্বস্তি
অকারণে বমি বমি ভাব, পেট ফাঁপা বা হালকা ব্যথা প্রায়ই ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা দেয়। এগুলো সাধারণত মানসিক চাপ, খাবারের গণ্ডগোল বা হালকা সংক্রমণ ভেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু উপসর্গগুলো যদি নিয়মিত ফিরে আসে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
৪. ক্ষুধামন্দা
ক্রমে ক্ষুধা হারিয়ে ফেলা বা খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাওয়াকে হেলাফেলা করা উচিত নয়। এটি হতে পারে ক্যানসারজনিত অ্যানোরেক্সিয়া বা ক্যাকেক্সিয়া (Cachexia)—যেখানে রোগীর খাওয়ার আগ্রহ সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। এতে শুধু ওজনই নয়, শরীরের পেশিও দ্রুত নষ্ট হয়। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি জানিয়েছে, এটি ক্যানসারের অন্যতম গুরুতর লক্ষণ।
৫. অকারণে দুর্বলতা ও অবসাদ
যদি নিয়মিত দুর্বলতা, অবসাদ বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি দেখা দেয়, তবে এর পেছনে পাকস্থলীর ক্যানসার লুকিয়ে থাকতে পারে। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বা রক্তশূন্যতার কারণে এ ধরনের ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অবসাদ সাধারণ ঘুম বা বিশ্রামে দূর হয় না। ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ক্যানসারজনিত ক্লান্তি (Cancer-related fatigue) স্বাভাবিক ক্লান্তি থেকে আলাদা এবং তা অবহেলা করলে মারাত্মক ক্ষতির ঝুঁকি থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব উপসর্গ দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত থাকলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যানসার শনাক্ত হলে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসায় সাফল্যের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।