
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে ভয়াবহ চাপে পড়েছে ভারত। রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র আমদানি করায় দেশটির ওপর নতুন করে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে ওয়াশিংটন। যা বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে যোগ হয়েছে।
এতে করে ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। ট্রাম্প ঘোষিত ভারতের ওপর নতুন এই ৫০ শতাংশ শুল্ক আগামী ২৭ আগস্ট কার্যকর হবে।
এই শুল্কভার ভারতকে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি করযুক্ত বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত করবে। যা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বাণিজ্যে কার্যত নিষেধাজ্ঞার সমান। এর ফলে ভারতের রপ্তানিমুখী শিল্পে বড় ধাক্কা এবং প্রবৃদ্ধিও অর্ধ শতাংশের বেশি কমে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে দেশটি।
এখনই এর প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ভারতীয় কারখানাগুলোতে দেওয়া অর্ডার বাতিল করছেন একের পর এক। কেউ কেউ আবার অর্ডার স্থগিত করেছেন অনির্দিষ্টকালের জন্য।
ভারতের তৈরি পোশাক, চামড়া ও বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হতো। কিন্তু অতিরিক্ত শুল্কের কারণে সেসব পণ্য এখন প্রতিযোগিতা হারাচ্ছে।
এক ভারতীয় ব্যবসায়ী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারকে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রে আর প্রতিযোগিতা করতে পারছি না। যেখানে বাংলাদেশের শুল্ক ২০ শতাংশ, সেখানে আমাদের দিতে হচ্ছে ৫০ শতাংশ। ফলে ক্রেতারা বাংলাদেশের দিকেই ঝুঁকছেন।
ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এখন বিকল্প পথ খুঁজছেন, আর সেই পথের নাম বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ববাজারে সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ, যা ভারতের তুলনায় অনেক কম।
ফলে ভারতের বাতিল হওয়া বিপুল অর্ডার সরাসরি চলে আসছে বাংলাদেশে। মার্কিন সংস্থাগুলো বাংলাদেশের কারখানায় নতুন অর্ডার দিচ্ছে। পাশাপাশি ভারতীয় বড় ব্যবসায়ীরাও এখন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অনেকে যৌথ উদ্যোগে কাজ করার চিন্তাভাবনাও শুরু করেছেন।
শুধু অস্থায়ী সমাধান নয়—ভারতীয় উদ্যোক্তারা দীর্ঘ মেয়াদে মার্কিন বাজার ধরে রাখতে বাংলাদেশকে ‘মধ্যবর্তী সেতু’ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন।
অর্থাৎ, ভারতীয় কোম্পানিগুলো সরাসরি নয়, বরং বাংলাদেশের কারখানাগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠাতে চান। এতে তারা নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে পারবেন বলে মনে করছেন।
বাংলাদেশি পোশাক কারখানাগুলো ইতোমধ্যেই চাপে পড়েছে। হঠাৎ করে অতিরিক্ত অর্ডার সামলাতে গিয়ে শ্রমিকরা হিমশিম খাচ্ছেন। মালিকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের এই সময়ে তাদের অর্ডার কয়েক গুণ বেড়েছে।
ফলে উৎপাদন ব্যস্ততায় কারখানাগুলো দিনরাত চলছে। তবে এর ইতিবাচক দিকও আছে—এতে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এক শীর্ষ রপ্তানিকারক বলেন, ‘আমাদের যেসব ক্রেতা আগে ভারতে অর্ডার দিতেন,
তারাই এখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অর্ডার এত বেড়েছে যে, সময়মতো ডেলিভারি দিতে আমরা সংগ্রাম করছি। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি ভারতের জন্য মারাত্মক সংকট ডেকে এনেছে।
দেশটির শিল্পপতিরা বাজার ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশের জন্য এটি এক বিরাট সুযোগ—নতুন বাজার দখল করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রবাহ আরও বাড়ানোর।
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির এই ধাক্কা বাংলাদেশকে এক বিরল সুবিধার অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আর ভারতের সামনে এখন একমাত্র প্রশ্ন—বাংলাদেশ ছাড়া তাদের বাঁচার উপায় কী?