
সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের কথা উঠলেই সবার আগে মাথায় আসে হৃদ্রোগের ঝুঁকি। কারণ একে অনেকেই বলেন “নীরব ঘাতক”—যার ফলশ্রুতিতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ জানেন না, কিডনিও সমানভাবে আক্রান্ত হয় উচ্চ রক্তচাপের কারণে।
কিডনিকে বলা যায় শরীরের প্রাকৃতিক ফিল্টার। প্রতিদিন কিডনি রক্ত পরিষ্কার করে, বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয় এবং শরীরের তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু রক্তচাপ দীর্ঘ সময় বেশি থাকলে এই সূক্ষ্ম ফিল্টারগুলো অবিরাম চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। ঠিক যেমন পানির জোরে পাইপ ফেটে যায়, তেমনভাবেই সময়ের সঙ্গে কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকে।
প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো সতর্কবার্তা নেই
উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনি রোগ—দুটোই প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় লক্ষণহীন। কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই বছরের পর বছর ক্ষতি জমতে থাকে। যখন ফোলাভাব, ক্লান্তি বা প্রস্রাবের পরিবর্তনের মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তখন অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গেছে।
এর চেয়েও জটিল ব্যাপার হলো, এটি দুই দিক থেকে কাজ করে। উচ্চ রক্তচাপ যেমন কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত কিডনি আবার রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। ফলে তৈরি হয় এক দুষ্টচক্র। যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াবেটিসের পর কিডনি ব্যর্থতার (Kidney Failure) দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। লক্ষ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই কোনো না কোনো মাত্রায় কিডনি ক্ষতিতে ভুগছেন, অথচ জানেনই না।
কেন কিডনি রোগ রক্তচাপ বাড়ায়?
তরল ও সোডিয়াম জমা হওয়া: কিডনি শরীরে কতটা তরল ও লবণ থাকবে তা নিয়ন্ত্রণ করে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয়, ফলে শরীরে তরল জমে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
হরমোনের প্রভাব: রক্তনালী প্রসারিত বা সংকুচিত হওয়ার সঙ্কেত দেয় কিডনি। কিডনি দুর্বল হয়ে গেলে এই হরমোনগত ভারসাম্য নষ্ট হয়, ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে।
অকাল শনাক্তকরণ অত্যন্ত জরুরি
নীরবে ক্ষতি: প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ ও উচ্চ রক্তচাপ দুটোই প্রায় লক্ষণবিহীন থাকে। ফলে অনেকেই দেরিতে টের পান।
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD): উচ্চ রক্তচাপ কিডনি ব্যর্থতার অন্যতম বড় কারণ। আবার কিডনি রোগ নিজেই রক্তচাপ আরও বাড়িয়ে দেয়।
ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী: কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক জনগোষ্ঠী, ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা এবং যাদের পরিবারে কিডনি সমস্যার ইতিহাস আছে, তাদের ঝুঁকি বেশি।
শেষকথা
কিডনি ও রক্তচাপ একে অপরকে সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। একদিকে ক্ষতি হলে দ্রুত অন্য দিকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সুস্থ থাকতে হলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং কিডনি সুরক্ষিত রাখা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।