
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের কাছে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আল জাজিরার অন্তত পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আছেন আল জাজিরার খ্যাতনামা সংবাদদাতা আনাস আল-শরীফ (২৮), মোহাম্মদ কুরেইকেহ, ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম জাহের, মুহাম্মদ নুফাল ও মুয়ামেন আলিওয়া। আল-জাজিরা জানায়, হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে সংবাদকর্মীদের জন্য স্থাপিত একটি তাঁবুতে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়, যাতে মোট সাতজন নিহত হন।
হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করে যে তারা আনাস আল-শরীফকে লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছে। সেনাবাহিনীর দাবি, তিনি হামাসের একটি সশস্ত্র সেলের প্রধান ছিলেন এবং সাংবাদিক সেজে কাজ করতেন।
মৃত্যুর ঠিক আগে আল-শরীফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ (আগে টুইটার) গাজা সিটিতে তীব্র ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের খবর দিচ্ছিলেন। পরে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে লেখা হয়, ‘যদি এই কথাগুলো আপনাদের কাছে পৌঁছায়, জেনে নেবেন—ইসরায়েল আমাকে হত্যা করতে ও আমার কণ্ঠ রুদ্ধ করতে সফল হয়েছে।’
২২ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার সর্বশেষ উদাহরণ এটি। বিভিন্ন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এই সময়ে প্রায় ২০০ গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন।
আল-জাজিরা এক বিবৃতিতে জানায়, ‘রোববার আল-শরীফসহ পাঁচজন সাংবাদিক গাজা সিটিতে সাংবাদিকদের জন্য স্থাপিত তাঁবুতে লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।’ আবেগঘন এক লাইভ সম্প্রচারে আল-জাজিরার এক উপস্থাপক সহকর্মীদের মৃত্যুসংবাদ দিতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী টেলিগ্রামে পোস্ট করে জানায়, ‘অল্প কিছুক্ষণ আগে গাজা সিটিতে আল-জাজিরা নেটওয়ার্কের সাংবাদিক সেজে থাকা সন্ত্রাসী আনাস আল-শরীফকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি হামাস সন্ত্রাসী সংগঠনের সেলপ্রধান ছিলেন এবং ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের ওপর রকেট হামলার দায়িত্বে ছিলেন।’
আল-শরীফ গাজার ময়দানি সংবাদকর্মীদের মধ্যে অন্যতম পরিচিত মুখ ছিলেন। যুদ্ধের শুরু থেকে প্রতিদিনই উত্তর গাজা থেকে সংবাদ পাঠাতেন। গত জুলাইতে ‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস’ (সিপিজে) তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেয়। হামলার পর সংস্থাটি গভীর হতাশা প্রকাশ করে জানায়, ‘বিশ্বস্ত প্রমাণ ছাড়া সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার ইসরায়েলের প্রবণতা এর উদ্দেশ্য ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।’
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সমিতি ঘটনাটিকে ‘রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ড’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। ইসরায়েল ও কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই তিক্ত। চলমান যুদ্ধের পর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দেশটিতে আল-জাজিরার সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে ও এর কার্যালয়ে অভিযান চালায়।
সূত্র: এনডিটিভি।