এখনও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ কেমিস্ট জ্যোতির

ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী হোসেন মার্কেটে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ড্রেনের ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ নারী কেমিস্টের সন্ধান এখনও মেলেনি। রবিবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনের খোলা ড্রেনের ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ হন তিনি।

অজ্ঞাত হিসাবে নিখোঁজ হলেও আজ সোমবার তার পরিচয় সনাক্ত হয়। তিনি পেশায় একজন ওষুধ কোম্পানির কেমিস্ট রিপ্রেজেনটেটিভ। তার নাম ফারিয়া তাসনিম জ্যোতি (২৪)। জ্যোতি চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪ নং ওয়ার্ড মসজিদ পাড়ার বাসিন্দা। বাবার নাম ওলিউল্লাহ আহাম্মদ বাবলু।। দুই ভাই লোটন ও শোভনকে নিয়ে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে হোসেন মার্কেট এলাকায় বসবাস করতেন জ্যোতিরা।

ঢাকা মিরপুরের মনি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি ওষুধের প্রতিষ্ঠানে কেমিস্ট হিসাবে চাকরি করতেন তিনি। রবিবার রাত ৮টার দিকে টঙ্গী হোসেন মার্কেটের ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ডাক্তার ভিজিট শেষে বাসায় ফেরার পথে হাসপাতালের সামনের ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হন জ্যোতি। টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে একটি বড় পানি নিষ্কাশনের ড্রেন পার হওয়ার সময় এক মহিলা ড্রেনে পড়ে পানির স্রোতে মুহূর্তে হারিয়ে যান। ড্রেনটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী অঞ্চল কর্তৃপক্ষের। দীর্ঘ দিন ধরে ড্রেনটির নানা স্থান খোলা অবস্থায় থাকায় ফুটপাত দিয়ে মানুষজনের চলাচল মারাত্মক ঝুঁকিতে ছিল। আজ রবিবার (২৮ জুলাই) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ জ্যোতির লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন হোসেন মার্কেটে ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনের ফুটপাতের খোলা ম্যানহোলে পড়ে জ্যোতির নিখোঁজের ঘটনায় এলাকাবাসী গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দোষছেন। তারা বলছেন, ড্রেনের মুখ বন্ধ থাকলে ড্রেনে পড়ে মানুষ নিখোঁজের এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতো না। টঙ্গী কলেজ গেট থেকে গাজীপুরা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটারের পথে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনটির নানা স্হান উম্মুক্ত। ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের পথ চলতে হয়।

তঘটনার সময় ফুটপত দিয়ে পার হতে গিয়ে প্রায় ১০ ফুট গভীরতার ড্রেনে পড়ে যান জ্যোতি। পানির প্রচণ্ড স্রোতে তিনি মুহূর্তেই তলিয়ে হারিয়ে যান। প্রথমে স্থানীয়রা উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলসহ তিনটি ইউনিটের সদস্যরা অভিযান চালাচ্ছে। প্রায় ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও নিখোঁজ জ্যোতির সন্ধান এখনও মেলেনি।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গী ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনের বিআরটি রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনটি দীর্ঘদিন ধরে উন্মুক্ত। সেখানে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কোন স্লাব বসায়নি, এমনকি সতর্কতামূলক কোন সাইনবোর্ডও ছিল না ঘটনাস্থলে। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় জ্যোতির পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন। ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে অনেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়ছেন।

টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র শাহিন আলম জনকণ্ঠকে বলেন, “আমাদের তিনটি ইউনিট উদ্ধার অভিযানে ঘটনাস্থলে কাজ করছে। পাশাপাশি দেশের সেরা পাঁচজন ডুবুরিও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন। আমরা জ্যোতির লাশ উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে ড্রেনে প্রবল পানির স্রোত এবং ড্রেনের গভীরতা বেশি হওয়ায় উদ্ধার অভিযান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *