
সম্প্রতি গত বছরের জুলাইয়ের আন্দোলনের একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এই ছবিতে দেখা যায়, রোড ডিভাইডারের আড়ালে দুই তরুণ-কিশোর। তাদের মধ্যে একজন নির্লিপ্ত অবস্থায়, আরেকজন ভীতসন্ত্রস্ত, আর পেছনেই
পুলিশের একটি দল গুলি ছুড়ছে। কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা ইশতিয়াক আহমেদ ছবিটি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘ভয় কেটে গেলে মানুষ, জীবনবিলাসী হয়ে ওঠে। সেই ছবির আলোচিত তরুণকে পাওয়া গেছে। তার নাম রায়ন মোল্লা।
তিনি কলেজ অব এভিয়েশনের শিক্ষার্থী। সেদিনের আলোচিত ছবির পেছনের গল্প শোনালেন। রায়ন বললেন, ‘১৮ জুলাই ৩০ জনের বেশি যখন স্টুডেন্ট ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আমরা বলি তাদের ছেড়ে দেন।
আমরা থানায় যাই, তখন পুলিশ আমাদের বলে আমরা চাইলেই ছেড়ে দিতে পারি না। আইজিপি মহোদয় আছে, ডিআইজি মহোদয় আছে। ওরা যখন ছাড়ছিল না, তখন আমাদের বাকি যারা স্টুডেন্ট আছে, তারা সবাই থানার চারপাশে চলে আসে।
তখন পুলিশ আমাদের চলে যেতে বলে। পুলিশ আমাকে বলে আমাদের কথা তো শুনতেছে না, তুমি ওদের ডিভাইডারের ওপাশে চলে যেতে বলো। আমরা একেবারে থানার কাছে ছিলাম, ওরা আতঙ্কে ছিল আমরা থানায় অ্যাটাক করি কি না।
আমরা বললাম, আমরা পিসফুল আন্দোলন করতে এসেছি, আমরা কাউকে অ্যাটাক করতে আসি নাই। আমি যখন পেছনে যেতে বললাম সবাইকে, অনেকেই পেছনে চলে গেল।
ওরা হুট করে গুলিবর্ষণ করল। আমি আসলে পিছু হটতে রাজি ছিলাম না, আমি আমার ভাইদের নিয়ে যাব। আমি বাগবিতণ্ডা করলাম, তখন ওরা হুট করে আমার হাতে গুলি ছোড়ে।
কেন শুয়ে ছিলেন ওভাবে? ওভাবে শুয়ে ছাড়া উপায় ছিল না, একইসঙ্গে সাহসও হারাননি। রায়নের ভাষ্য, ‘আমার বাম হাতে ১০টার মতো ছররা গুলি লাগে। আমি পুলিশকে বললাম, আপনারা তো ওয়াদা করছিলেন আজকে গুলি চালাবেন না।
তারপরে হুট করে আমার পায়ে গুলি মারল। পায়ে গুলি লাগলে আমি ব্রেইনে একটা শক খাই, দুই সেকেন্ডের জন্য বেহুশ হয়ে যাই, ডিভাইডারের পাশে পড়ে যাই। তখন আমার হাতে দুইটা অপশন ছিল—পুলিশের দিকেই যাওয়া, না হয় ডিভাইডারের পাশেই থাকা।’
রায়ন মোল্লার পাশে থাকা থাকা অপর ছেলেটি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যখন ওখানে পড়ে ছিলাম, তখন অনেকেই আমাকে নিতে আসতে চাইছিল। কিন্তু এতই গুলিবর্ষণ করছিল যে, কেউ আসতে পারে নাই। আমার পাশে যে ছেলেটি ছিল, সে দেখেছে আমি গুলি খাইছি। সেও খুব ভয় পাইছে। তার ভয় দূর করার জন্যই আমি নিজেকে কনফিডেন্ট দেখাইছি। আমার যে ক্ষতটা আছে, এটা যেন ওদেরকে সাহস জোগায়।ওই ছেলেটাকেও বলছি তুমি ভয় পেয় না।’
উত্তরার আন্দোলনের অন্যতম নেপথ্যেও ছিলেন তিনি, এমনটাই জানিয়ে রায়ন মোল্লা বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না, এখনো নাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটা বন্ধু আছে, রেদওয়ান, রাকিব তারা আহত হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর আমার আন্দোলনে নামার আগ্রহ তৈরি হয়। রাতে একটা প্ল্যান করি যে ১৬ জুলাই উত্তরাতে একটা প্রোটেস্ট হবে। এখানে কোনো কেন্দ্রীয় নেতা বা কারো কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। আমরা যারা উত্তরাতে আছি আমাদের কয়েকজনের চেষ্টাতেই এখানে আন্দোলন হয়েছে।’
আন্দোলনের ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট নন রায়ন। জুলাই আন্দোলনের আশার প্রতিফলন হয়নি জানিয়ে রায়ন বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের আশার কোনো প্রতিফলন হয়নি। আমাদের বিচারটা হয় নাই, পুলিশের বিচারটা হয় নাই। চিকিৎসার অভাবেও অনেকে মারা গেছে, এমন একজন আমার পরিচিত আছে বাউফলের—ও চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে।’