রান্নাঘরে মেয়েকে চারবার গুলি করেন বাবা, জানালো পুলিশ

টেনিস খেলোয়াড় ও টেনিস অ্যাকাডেমির মালিক রাধিকা যাদবকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তাঁর বাবা দীপক যাদবকে শনিবার গুরুগ্রামের একটি আদালত ১৪ দিনের জুডিশিয়াল হেফাজতে পাঠিয়েছে। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার সকালেই ২৫ বছর বয়সী রাধিকাকে তাঁদের সেক্টর ৫৭-এর বাড়ির রান্নাঘরে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ঘটনার পরপরই পুলিশ দীপক যাদবকে তাঁদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। তাঁর লাইসেন্সকৃত রিভলভারটিও উদ্ধার করা হয়েছে, যেটি দিয়ে রাধিকাকে গুলি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

রাধিকাকে হত্যার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে সন্দেহের তালিকায় থাকলেও, তদন্তকারী অফিসাররা রাধিকার মা মঞ্জু যাদবকে ক্লিন চিট দিয়েছেন। পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না এবং ঘটনাটিও তিনি প্রত্যক্ষ করেননি।

গুরুগ্রাম পুলিশের মুখপাত্র সন্দীপ কুমার বলেন, “প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়েছিল, তবে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে মঞ্জু যাদব হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। দীপক যাদব একাই পরিকল্পনা করে মেয়েকে হত্যা করেন।”

তদন্তে জানা গেছে, দীপক যাদব সম্প্রতি সামাজিকভাবে অপমানিত হচ্ছিলেন বলে মনে করতেন। তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, লোকজন মনে করছিলেন তিনি মেয়ের আয়ে জীবনযাপন করছেন, যা তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত করেছিল। তিনি গত ১৫ দিন ধরে বিষণ্নতায় ভুগছিলেন বলে দাবি করেছেন।

তিনি পুলিশকে আরও বলেন, তিনি মেয়েকে তাঁর টেনিস অ্যাকাডেমি বন্ধ করতে চাপ দিচ্ছিলেন, যা পারিবারিক কলহ সৃষ্টি করে এবং শেষপর্যন্ত হত্যাকাণ্ড ঘটে।

তদন্তে উঠে এসেছে, বৃহস্পতিবার সকালে দীপক তাঁর ছেলে নয়, বরং নিজে দুধ আনতে না গিয়ে ছেলেকে বাইরে পাঠান। সেই ফাঁকে রান্নাঘরে থাকা মেয়েকে পিছন থেকে চার রাউন্ড গুলি করেন। পুলিশ জানায়, গুলির চিহ্ন ও ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী ঘটনার সত্যতা মিলেছে।

রাধিকাকে চারবার গুলি করা হয়েছিল, প্রতিটি গুলিই তাঁর পিঠে লেগেছে। ময়নাতদন্তে শরীর থেকে গুলির টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত দীপক যাদব তদন্তে খুব বেশি কথা বলেননি, সম্ভবত তিনি এখনও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বা অনুতপ্ত।

ফরেনসিক রিপোর্ট, গানপাউডার রেসিড্যু বিশ্লেষণ এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দীপকের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে।

রাধিকা ছিলেন হরিয়ানা রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় টেনিস খেলোয়াড়দের একজন। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে তাঁর আইটিএফ ডাবলসে ক্যারিয়ার-সেরা র‍্যাংকিং ছিল ১১৩। তিনি মহিলাদের ডাবলসে হরিয়ানায় পঞ্চম স্থানে ছিলেন। চলতি বছরের মার্চে তিনি একটি টেনিস অ্যাকাডেমি চালু করেন, যেখানে ২০ জন খেলোয়াড় প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।

তিনি স্কটিশ হাই ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্রী ছিলেন এবং ২০১৮ সালে কমার্স বিভাগ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ হন। তিনি কিশোর বয়সেই টেনিস শুরু করেন। সম্প্রতি এক কাঁধের চোটে ভুগছিলেন এবং ফিজিওথেরাপি নিচ্ছিলেন, তবে তা তাঁর কোচিং বন্ধ করতে পারেনি।

সূত্রঃ হিন্দুস্তান টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *