
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন রোধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপে বিপাকে পড়েছেন দেশটিতে বসবাসরত হাজারো অনিবন্ধিত অভিবাসী। অনেকে ইতোমধ্যে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছেন, আর যারা এখনো রয়ে গেছেন, তারা ভয়ে বাড়ির বাইরে পা রাখতেও সাহস পাচ্ছেন না।
ফ্লোরিডার বাসিন্দা মারিয়া (ছদ্মনাম) জানান, সম্প্রতি তার বোনকে গ্রেফতার করে মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এতে মারিয়ার নিজের ভবিষ্যত নিয়েও গভীর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি খুবই উদ্বিগ্ন। যারা এখানে আছে, সবাই তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এসেছে। এখন তারা মা-বাবাকে সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা করে দিচ্ছে।
আমি ২০ বছর ধরে এখানে আছি, কিন্তু এখনো আমার বৈধতা নিশ্চিত করতে পারিনি।” তার বোনের সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও তাদের ভবিষ্যত এখন অনিশ্চিত। বর্তমানে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে পারিবারিক বিচ্ছিন্নতার ঘটনা ব্যাপক হারে বাড়ছে। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, কাউকে অভিবাসন দপ্তরে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
গত সপ্তাহে এক কিউবান নারী, হেইডি সানচেজ তেজেদা, যিনি ট্যাম্পাতে ইমিগ্রেশন অফিসে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে আটক হন এবং পরে হাভানায় ফেরত পাঠানো হয়। তার স্বামী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং তারা এক বছরের একটি কন্যাশিশুর বাবা-মা।
হেইডি বলেন, “আমার মেয়ে ইন ভিট্রো প্রক্রিয়ায় জন্মেছে, বহু চেষ্টার পর আমি মা হয়েছি। আমি এ কথা বলছি যাতে সবাই বুঝতে পারে আমার মেয়ে থেকে আলাদা হওয়ার কষ্ট কতটা ভয়াবহ। সে-ই আমার জীবন, আর আমাকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলা হচ্ছে।”
ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে দেশজুড়ে অভিযান জোরদার করেছে এবং অনেক মানবিক অভিবাসন সুবিধাও বাতিল করা হয়েছে। অনেককে ফ্লোরিডার ক্রোম আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে, যেখান থেকে নির্যাতন ও অতিরিক্ত ভিড়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি বছরে ওই কেন্দ্রে দুই অভিবাসী পুরুষের মৃত্যু ঘটেছে।
অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা আইনজীবী উইলিয়াম অ্যালেন, যিনি ৫০ বছর ধরে এই কমিউনিটিতে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, “এই প্রথমবার আমি অভিবাসী কমিউনিটিতে এতটা আতঙ্ক দেখছি। সরকার এটা ইচ্ছা করেই করছে। তারা ভয় দেখিয়ে মানুষকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করতে চায়। অনেকেই সত্যিই ভয় পেয়ে নিজ উদ্যোগে চলে যাচ্ছে।”
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন, কিন্তু তার এই নীতির ফলে বহু পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। অনেকেই জানেন না, তারা আদৌ কখনও তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হতে পারবেন কি না।